আমাদের বক্তব্য
শ্রী ভক্তি সিদ্ধান্ত বাণী
শ্রী ধাম মায়াপুর, ২০২৪
শ্রীশ্রী গুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ
চেতনার জাগরণ
(শ্রীগৌড়ীয় মঠের একমাত্র নির্ভীক মুখপাত্র-যা শ্রীল প্রভুপাদ সরস্বতী ঠাকুরের কৃপায় আত্মপ্রকাশ করেছেন।)
অচৈতন্যমিদং বিশ্বং যদি চৈতন্যমীশ্বরম্।
ন বিদুঃ সৰ্ব্বশাস্ত্রজ্ঞা হ্যপিভ্ৰামন্তি তে জনাঃ৷৷(শ্রীচৈতন্য চন্দ্ৰমৃতম্ ৩৭সংখ্যা) অর্থাৎ যাঁরা শ্রীকৃষ্ণ-চৈতন্যমহাপ্রভুকে ‘সাক্ষাৎ ভগবান্' বলে উপলব্ধি না করেন, তাঁরা সর্ব্বশাস্ত্রজ্ঞ হলেও এই অচৈতন্য বিশ্বসংসারে অর্থাৎ হরিবিমুখতার রাজ্যে ভ্রমণ করে থাকেন। গৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ-পরমহংস জগদ্গুরু জানিয়েছেন যে,—“যদি আমি চরম (বা পরম) মঙ্গলের পথের অনুসন্ধান চাই, তবে অসংখ্য ইহজগতের জনপ্রিয় জ্ঞানীগণের নানা উপদেশ উপেক্ষা করে, কেবলমাত্র এমন একজন মহান পুরুষের উপদেশ শ্রবণ করতে চাই, যিনি স্ব-স্বরূপে সুপ্রতিষ্ঠত।”
কঠোপনিষৎ ২।৩।১৪ শ্লোকে জনজাগরণের চেতাবনীতে (সতর্কবার্ত্তায়) দেখা যায় যে,— “উত্তিষ্ঠিত, জাগ্রত, প্রাপ্য বরান্ নিবোধত। ক্ষুরস্য ধারা নিশিতা দুরত্যয়া। দুর্গম্ পথস্তৎ কবয়ো বদন্তি৷৷”
স্বয়ং বেদ পুরুষ সাধুগণের সম্বন্ধে হিতোপদেশে জানিয়েছেন যে,—“হে সাধুগণ! অথবা হে মহোদয়গণ! নানবিধ বিষয় চিন্তা থেকে নিবৃত্ত হও, অনর্থ পরিত্যাগ করে, স্ব-স্বরূপে উদ্বুদ্ধ হও, মহদ্ব্যক্তিগণের নিকট থেকে কৃপালাভ করে ভগবানকে জানবার জন্য সচেষ্ট হও। ক্ষুরের ধারের ন্যায় সংস্কৃতি (বা সংসার) অতীব তীক্ষ্মা অর্থাৎ বহু দুঃখ কারিণী, দূরত্যয়া অর্থাৎ ভগবজ্ঞান ব্যতীত সংসার উত্তীর্ণ হওয়া অসম্ভব। দিব্যসূরীগণ সেই সংসার নিবর্ত্তক ব্রহ্মকে অতি যত্নে প্রাপ্য বলে কীর্ত্তন করেন অর্থাৎ সদ্গুরু পদাশ্রয়ে সযত্নে ভগবৎ অনুশীলন ব্যতীত সংসার তরণের আর উপায় নেই।”
পূর্ণ চেতন বস্তুকে উপলব্ধি করতে হলে, নিজে স্বয়ং পূর্ণ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। শ্রীল প্রভুপাদ জানিয়েছেন যে,—“শ্রীচৈতন্য কি বস্তু— জানতে হলে সর্ব্বপ্রকার অসৎসঙ্গ সর্ব্বতোভাবে পরিত্যাগ করা সর্ব্বাগ্রে প্রয়োজন। কারণ ঐগুলি সব কৃমিকীট সদৃশ। চিৎশরীরের পুষ্টির কল্পে যাকিছু করা যায়,—সেগুলো সব সারবস্তু হরণ করে অসহায় জীবকে পারমর্থিক পথে ভিক্ষারী করে দেয়। শ্রীল প্রভুপাদ বলতেন যে,— “আমরা কি চাই, আর কি চাই না, — তার একটা চূড়ান্ত বোঝাপড়া হওয়া একান্তই প্রয়োজন। নচেৎ হন্ন্যে হয়ে জন্ম জন্ম সংসারচক্রে ভ্রমণ করতে হবে—এটা আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ নয়।”
শ্রীল প্রভুপাদ জানিয়েছেন যে,—“যে বা যারা হরিকীর্ত্তন হরিভজনের নামে জগদ্বাসীকে বঞ্চনা করছে, তাদের নিকট বঞ্চিত হওয়াটাই বর্ত্তমান যুগের এক যুগধর্ম্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।” অর্থাৎ বঞ্চিত না হলে আদৌ ভাল লাগে না। “চেতনার জাগরণ”-নামে আমাদের (শ্রী ভক্তি-সিদ্ধান্ত বাণী সেবা ট্রাষ্ট) এই নবপ্রকাশিত ওয়েবসাইট আপনাদের মোহনিদ্রা ভঙ্গ করে চেতনায় সুপ্রতিষ্ঠত করতে সহায়তা করবে এবং শ্রীল প্রভুপাদের আদেশ পালন কল্পে আমরা বদ্ধ পরিকর। সত্যকে গোপন করা, তথা সত্যকে গোপন করে সম্পূর্ণ মিথ্যাকে স্থাপন করা, অথবা অর্দ্ধসত্য জ্ঞাপন করে জনগণকে ততোধিক ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করা—এ যে কতবড় ভয়ঙ্কর অপরাধ তা ভাবা যায় না। অর্দ্ধসত্য প্রকাশ অপেক্ষা সম্পূর্ণ মিথ্যা বরং ভাল। শ্রীমন্মহাপ্রভুর উক্তি নিম্নে দেওয়া গেল, যথা—
“বেদ মুখে মায়াবাদ-বৌদ্ধকে অধিক।”—(চৈতন্যচরিতামৃত)
অর্থাৎ বেদকে সম্মুখে রেখে লোকের চোখে ধূলো দিয়ে বেদ-বিরুদ্ধ মায়াবাদ স্থাপন এক জঘন্যতম মহাপরাধ; বরং বৌদ্ধগণকে অন্ততঃ প্রত্যক্ষভাবে নাস্তিক জেনে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়, কিন্তু শঙ্কর সম্প্রদায়ের ঘোরতর বেদবিরুদ্ধ কার্য্যকলাপ সনাক্ত করা প্রায় অসম্ভবই বটে। ঠিক তদ্রূপ গৌড়ীয় মঠ ও মূল প্রভুপাদের বিরুদ্ধ কার্যকলাপ সনাক্ত করা প্রায় অসম্ভবই বটে। ঠিক তদ্রূপ গৌড়ীয় মঠ ও মূল প্রভুপাদের বিরুদ্ধ কার্যকলাপ প্রায় ৫০-৬০ বৎসর যাবৎ সুকৌশলে চলে আসছে। কিন্তু কেউ এই গোপন শত্রুতা সনাক্ত করতে সমর্থ হচ্ছে না।— এই ভ্রম নিরসন কল্পে আমরা বদ্ধ পরিকর।