ব্যাস পূজা বা গুরু পূজা কোন একটি সময়সীমাবদ্ধ অনুষ্ঠান নহে বরং এটি এক সৎশিষ্যের হৃদয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে অনুষ্ঠেয়
- The Symbol of Faith
- Oct 27, 2024
- 2 min read

শ্রীশ্রী গুরু গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ
ব্যাস পূজা বা গুরু পূজা কোন একটি সময়সীমাবদ্ধ অনুষ্ঠান নহে বরং এটি এক সৎশিষ্যের হৃদয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে অনুষ্ঠেয়
—শ্রীশ্রীল শ্যাম দাস বাবা মহারাজ
গৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ পরমহংস জগদগুরু জানিয়েছেন যে,— “যদি আমার প্রত্যেক বর্ষ প্রারম্ভে, প্রত্যেক মাস প্রারম্ভে, প্রত্যেক দিন প্রারম্ভে, প্রত্যেক মুহূর্ত্ত প্রারম্ভ, শ্রীগুরু চরণের স্মৃতি না থাকে তাঁহা হইলে আমি ঘোরতর অমঙ্গলের সম্মুখীন হবই হব। শ্রীগুরু চরণের বিস্তৃতি আমার হৃদয়ে গুরু সাজার বাসনা আনবে। আমাকে সেই গুরু হইয়া পূজা গ্রহণ করবার যে অন্যাভিলাষ তাঁর দায়িত্ব নিতে হবে। ইহাই পরমসত্য ব্যতীত অন্য জিনিসের প্রতি আসক্তি তৈরি করে।”
গৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ পরমহংস জগদগুরু জানিয়েছেন যে,— “আজ আমার শ্রীগুরু পাদপদ্মের ব্যাস পূজা এবং আমি আজ শ্রীগুরু পাদপদ্মে পুষ্পাঞ্জলি দেব এবং সারা বছর যা ইচ্ছা তাই করবো”। শ্রীল প্রভুপাদ আরো জানালেন— “আনুগত্যহীন ব্যক্তি পশু সদৃশ, এখানে আনুগত্য মানে হল শুদ্ধ বৈষ্ণবের আনুগত্য। একজন সৎশিষ্য অনুক্ষণ নিরবচ্ছিন্ন ভাবে শ্রীগুরু পাদপদ্মের পূজা করিয়া থাকেন,– গ্রন্থ প্রকাশনা, প্রবন্ধ লেখন, হরিকথা-কীর্ত্তনাদি বিভিন্ন ক্রিয়া-মুদ্রার এবং তাঁর শুদ্ধ ও চরমতম আচার-আদর্শের দ্বারা, এমন আচার-আদর্শ– যা কিনা তাঁর গুরুবর্গের আনুগত্য হইতে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত নয়।
বাস্তব অর্থে পুষ্পাঞ্জলী মানে– কোনরকম আপস বা স্বার্থ গন্ধ ছাড়া নিজেকে সম্পূর্ণরূপে শ্রী গুরু পাক পদ মে সঁপে দেওয়া যতক্ষণ না আমরা নিজেকে এবং নিজের সর্ব্বস্ব কিছুকে সদগুরু পাদ-পদ্মে সমর্পণ না করে দিচ্ছি, ততক্ষণ দিব্যজ্ঞান প্রাপ্তির কোন প্রশ্নই আসে না। শ্রীগুরুদেবকে কিছু জড়-জগতের বস্তু প্রদানপূর্ব্বক, তাঁহার কৃপা লাভ করা অসম্ভব। একজন তখনই বাস্তবিক ভাবে সৎশিষ্যরূপে পরিগনিত হতে পারেন যখন তিনি নিজেকে ও নিজের সর্ব্বস্ব কিছুকে গুরুচরণে সমর্পনপূর্ব্বক নিষ্কিঞ্চন দশায় উন্নীত হবেন, নিষ্কিঞ্চন অর্থাৎ জড় সম্পত্তি রহিত।
শ্রীল বামন গোস্বামী মহারাজ বলতেন— “আমি ঘোষণা করে দিলাম সকলের সামনে যে,– “গুরুদেব! আমার সবকিছু এইবার থেকে আপনার”, কিন্তু এদিকে ওই ‘সবকিছুর’ চাবিকাঠি নিজের কাছে গোপনভাবে রেখে দিলাম। এর মানে আমাদের গুরুদেবে পূর্ণ বিশ্বাস নাই।— এই ধরনের কিছুকে গুরু সেবা বলা যায় না। যখন একজন শিষ্য নিজের জন্য আলাদা করে কিছু তুলে না রেখে অন্তর থেকে নিজেকে ও নিজের সর্ব্বস্বকিছুকে শ্রীগুরু চরণে সমর্পণ করেন । এ হেন জনকেই শ্রীগুরুদেব বিশ্রম্ভ সেবক ও স্নিগ্ধ শিষ্য বলে জানেন।”
জীবনে সদগুরু পাওয়াটা অত্যন্ত কঠিন কিন্তু তাঁর থেকে বেশি কঠিন হলো একজন সৎশিষ্য পাওয়া আজকালকার দিনে এ এক ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে,— শিষ্য গুরুর সেবা করে না বরং গুরু শিষ্যের সেবা করে। প্রকৃতপক্ষে, গুরুর কোন দুর্ব্বলতা, দোষ বা ভ্রান্ত ধারণা থাকতে পারে না, অন্যথায় তাকে গুরু (গম্ভীর) বলা যায় না। যদি গুরুকে শিষ্যের সেবা করতে হয়, তাহলে গুরুর গাম্ভীর্য্য কোথা থেকে আসবে? সুতরাং, যদি কোন সদগুরু না থাকে তাহলে কোন সৎশিষ্য কী করে থাকতে পারে? যদি একজন সদগুরু থেকে থাকেতে তাহলে অবশ্যই একজন সৎশিষ্য থাকবেন, হয়তো আমরা মায়া বা ভ্রমের কারণে তাদের চিনতে পাচ্ছি না। বর্ত্তমানে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে উঠেছে যে প্রায় কেউই বাস্তবিক প্রণয়ী ভক্ত এবং কিছু তথাকথিত প্রণয়ী ভক্তের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারছে না। আমরা যথেষ্ট নিষ্কপট না হলে, নিজেদেরকেই প্রতারিত করব, সে তথাকথিত গুরু সেজেই হোক বা তথাকথিত শিষ্য সেজেই হোক।
শ্রীল প্রভুপাদ জানিয়েছেন যে,– “তিনি হলেন গুরু যিনি ভগবানের কাছ থেকে এই ভয়ঙ্কর ভবসাগর থেকে সমস্ত জীবগণকে রক্ষা করবার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন, কিন্তু আমরা যদি সদগুরু-বৈষ্ণবকে উপেক্ষা করি, যাদের থেকে আমরা নিত্য মঙ্গল লাভ করতে পারি।
Yorumlar