top of page
Search

শ্রীমধ্বমুনি চরিত

  • Writer: The Symbol of Faith
    The Symbol of Faith
  • Oct 13, 2024
  • 5 min read

Updated: Oct 14, 2024

শ্রীমধ্বমুনি চরিত

(জন্ম, দেশ ও কাল)


— শ্রীশ্রীল প্রভুপাদ


দেশের পারিপার্শ্বিক পরিচয়


উত্তরে হিমালয় এবং অন্য দিকত্রয়ে সমুদ্রবেষ্টিত ভূখণ্ড ভারতবর্ষ। ভারতের মধ্যদেশে বিন্ধ্যগিরি অবস্থিত। বিন্ধ্যের উত্তরাংশ আর্য্যাবর্ত্ত এবং দক্ষিণভাগ দাক্ষিণাত্য নামে প্রসিদ্ধ।


দাক্ষিণাত্যে পূর্ব্বাচল ও পশ্চিমাচল নামে দুইটা গিরি শ্রেণী বিরাজমান। পশ্চিমাচলকেই সংস্কৃত ঐতিহ্যে 'সহ্য-পর্ব্বত' বলিয়া উল্লিখিত হয়। এই সহ্য গিরিমালার পশ্চিমে তিনটী প্রদেশ আছে। বোম্বাইর দক্ষিণাংশ হইতে কোন্কান্, তদ্দক্ষিণে ক্যানারা এবং তাহার দক্ষিণে কেরল রাজ্য। কোন্কান্, ক্যানারা এবং কেরল-এই প্রদেশত্রয়ের পশ্চিম সীমা পশ্চিম-সাগর বা আরব সমুদ্র দ্বারা আবদ্ধ। কোন্কান্ প্রদেশের ভাষা মহারাষ্ট্রীয়ের ন্যায়। বর্ত্তমান সময়ের ম্যালেবার জিলা এবং কোচিন ও ত্রিবাঙ্কুর দেশীয় শাসনাধীন রাজ্যদ্বয় কেরলান্তর্গত ভূমি।


ক্যানারা প্রদেশ সম্প্রতি দুইভাগে বিভক্ত হইয়াছে। উত্তর ক্যানারা জিলা, বোম্বাই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ ক্যানারা জিলা মাদ্রাজ বিভাগে অবস্থিত। উত্তর ক্যানারায় কেবল ক্যানারিজ ভাষা প্রচলিত আছে, পরন্তু দক্ষিণ ক্যানারায় ক্যানারিজ, তেলেগু এবং মলায়লম্—তিন ভাষাই প্রচলিত দেখা যায়। উত্তর ক্যানারা জিলায় আটটী তালুক ও দক্ষিণ ক্যানারায় পাঁচটী তালুক বা উপবিভাগ আছে।


উড়ুপী তালুকের দূরত্ব


দক্ষিণ ক্যানারার উত্তরাংশে খোশালপুর বা কুণ্ডাপুর তালুক। তদ্দক্ষিণে উড়ুপী তালুক, তদ্দক্ষিণে ম্যাঙ্গোলোর তালুক। ম্যাঙ্গোলোরের পূর্ব্বে পুত্তুর বা উপ্পিনন্গড়ি তালুক এবং দক্ষিণে কাষাড়গড় তালুক। দক্ষিণ ক্যানারা ১৪ অংশ ৩১ কলা উত্তর অক্ষাংশ হইতে আরম্ভ করিয়া ১৫/৩১ উত্তর অক্ষাংশ পর্য্যন্ত নির্দিষ্ট আছে। কলিকাতা হইতে ক্যানারা জিলা ৫৬ মিনিট পশ্চিমে অবস্থিত অর্থাৎ কলিকাতায় ১২টার সময় তথায় ১১টা ৪ মিনিট হয়।


উড়ুপী তালুকের প্রধান নগর উড়ুপী


দক্ষিণ ক্যানারা জিলার প্রধান নগর ম্যাঙ্গোলোর। উহা ম্যাঙ্গোলোর তালুকের অন্তর্গত এবং নেত্রাবতী নদীর, উপর স্থিত। কাষাড়গড় চন্দ্রগিরি বা পয়স্বিনী নদীর উপরে। উড়ুপী। তালুকের প্রধান স্থান উড়ুপী। উড়ুপী তালুকের উত্তরাংশে কুণ্ডাপুর, পূর্ব্বাংশে মহিশূর রাজ্য, দক্ষিণে ম্যাঙ্গোলোর তালুক এবং পশ্চিমে আরব সাগর।


উড়ুপী নিকট পাজকাক্ষেত্রের সন্নিহিত তীর্থপঞ্চক


বর্ত্তমান উড়ুপী নগরের পশ্চিম দক্ষিণ কোণে পাজকাক্ষেত্র নামে একটী জনপদ ছিল। উড়ুপী হইতে পাজকাক্ষেত্র সমুদ্রকূলে কিঞ্চিদধিক এক ক্রোশের মধ্যে অবস্থিত। সম্প্রতি পাজকাক্ষেত্র নির্জন ত্যক্তপল্লী। এখানে *দণ্ডতীর্থ* নামে এক পুষ্করিণী আছে এবং বিমানগিরি নামে পর্ব্বতের উপর দেবী দুর্গার মন্দির আছে। বিমানগিরির পাদদেশে উপত্যকায় পাজকাক্ষেত্র। পৌরাণিক- গণের নিদ্দেশে সহ্যাদ্রিতে ত্রেতাযুগে পরশুরাম নির্জ্জন বাস করেন। উদ্ভুপী ও তন্নিকটবর্তী পাজকাক্ষেত্রের সন্নিহিত ক্রোশব্যাপী স্থানমধ্যেই *পরশুতীর্থ* , *ধনুস্তীর্থ* , *গদাতীর্থ* , এবং *বাণতীর্থ* বিরাজমান। এই সকল তীর্থ, তীর্থ-যাত্রীর এখনও পরম শান্তির কেন্দ্র।


উড়ুপীর অপর নাম রজতপীঠপুর


উড়ুপী নগরে চন্দ্রমৌলেশ্বর শিবমূর্ত্তি বহুকাল হইতে আছেন। গ্রামের নাম উড়ুপী চন্দ্র-মৌলেশ্বর হইতে উদ্ভুত। 'উড়ুপ' শব্দে 'চন্দ্র' এবং উড়ুপী বলিয়া 'চন্দ্র-মৌলেশ্বর'কেই সাধারণতঃ স্বল্পাক্ষরে লক্ষ্য করা হয়। এই উড়ুপী নগরই রজতপীঠপুর বলিয়া আখ্যাত হয়। এখানে অনন্তেশ্বরেরও এক মন্দির পূর্ব্বকাল হইতে আছে। অনন্তেশ্বর ও চন্দ্র-মৌলেশ্বরের মন্দির উভয়ই পূর্ব্বমুখী ও একটী অপরটীর পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত।


শ্রীঅনন্তেশ্বরের লিঙ্গমূর্ত্তি— শৈব-চক্ষে শিব ও বৈষ্ণব-চক্ষে পরশুরাম


সহ্য-গিরিরাজের পশ্চিমে সমুদ্রকূলবাসী ব্রাহ্মণগণ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। কেহ কোন্কান্, কেহ বা সারস্বত এবং অন্য কেহ বা শিবাল্লী বলিয়া নিজ ব্রাহ্মণশাখার পরিচয় প্রদান করেন। কোন্কান্ ব্রাহ্মণ ও সারস্বত ব্রাহ্মণ দেশ হইতে শ্রেণী স্থির করিয়াছেন। শিবাল্লীগণ তদ্রূপ নহেন। ক্যানারি ভাষায় শিবাল্লী' বা 'শিববেল্লী' শব্দে 'শিবের রূপা' বুঝায়। ইহারা রজতপীঠপুরস্থ। অনন্তেশ্বরের রৌপ্য সিংহাসনের উল্লেখে নিজ পরিচয় প্রদান করেন। অনন্তেশ্বরের মূর্তি লিঙ্গমূর্তি, কিন্তু অনেকে বলেন, পরশুরাম স্বয়ং ঐরূপে রৌপ্যসিংহাসনে অধিষ্ঠিত আছেন। কেহ কেহ বলেন অনন্তেশ্বর বিষ্ণুমূর্তি। শৈবগণ শিব-বুদ্ধিতে শিব-সহস্রনাম এবং বৈষ্ণবগণ বিষ্ণুবুদ্ধিতে একই অনন্তেশ্বরের বিষ্ণু-সহস্রনাম দ্বারা পরিতোষ বিধান করেন। বিষ্ণু বিগ্রহ যেরূপ অন্যত্র পাঞ্চরাত্রিক বিধানানুসারে পূজিত হন, অনন্তেশ্বর তাদৃশ নহেন। ইঁহার তন্ত্র-মতে পূজা হইয়া থাকে। দক্ষিণ ক্যানারার এই সকল গ্রামে ভূত-প্রেতেরও উপাসনা অদ্যাবধি প্রচলিত আছে। এ প্রদেশে বিষ্ণুমন্দির বা বিষ্ণুবিগ্রহ-সংখ্যা নিতান্ত বিরল।


তুলুব রাজ্য ও কুম্ব্লা নগরী


কষাড়গড় ও বেকালের মধ্যে চন্দ্রগিরি বা পয়স্বিনী নদী প্রাচীন তুলুব রাজ্যের দক্ষিণ সীমা বলিয়া নির্দিষ্ট হয়। তুলুব রাজ্যের অধিবাসীগণের ভাষা টুলু। শিবাল্লী ব্রাহ্মণগণ টুলু ভাষায় কথোপকথন করিয়া থাকেন।


কষাড়গড় জনপদের চারি ক্রোশ উত্তরে সমুদ্রকূলে কুম্ব্লা নাম্নী নগরী, এখানে রেলওয়ে ষ্টেশন আছে। এই নগরী পূর্ব্বকালে বিশেষ সমৃদ্ধিশালিনী ছিল। এখানে এক সামন্তরাজের বাস ছিল। ইহাদের অধীনেই ম্যাঙ্গোলোর ও উড়ুপী তালুকগুলি ছিল বলিয়া অনেকে অনুমান করেন। আজও কুমারসামন্ত রাজবংশ ব্রিটিশ গভর্ণমেন্টের নিকট বৃত্তিভোগ করিয়া রাজা বলিয়া পরিচিত আছেন।


শ্রীশ্রীমন্ মধ্বাচার্য্যের জন্মস্থান


রজতপীঠপুর বা শিবাল্লী বা উড়ুপী গ্রামের সন্নিহিত পাজকাক্ষেত্রে শ্রীমন্মধ্বাচার্য্য প্রথম সূর্য্যালোক দর্শন করেন। পাজকাক্ষেত্রে অদ্যাপিও তাঁহার জন্মস্থান নিদ্দিষ্ট আছে। তাঁহার অভ্যুদয় কালের পর্ণকুটীরাধিষ্ঠিত স্থান তাঁহার ঐশ্বর্য্যসম্পন্ন কোন সেবক কর্ত্তৃক পরে পাষাণনিম্মিত গৃহে পরিণত হইয়াছে। তবে পাথরের ঘর ক্ষুদ্র ও পল্লীটী জনহীন; পূর্ব্বের স্মৃতি-চিহ্ন মাত্র অদ্যাপি বর্ত্তমান আছে।


শ্রীমধ্বমুনির পিতা মধ্যগেহের প্রার্থনা


উড়ুপী নগরে এক ব্রাহ্মণ বাস করিতেন। তিনি অতি ক্লেশে শুক্ল- বিত্তার্জ্জনপূর্ব্বক পতিব্রতা পত্নীর সহিত দিনপাত করিতেন। সাংসারিক বিচারক্রমে পুত্রই পিতার পারত্রিক মঙ্গলের হেতু জ্ঞান করিয়া অনন্তেশ্বরের নিকট দেবসদৃশ একটা অপত্য লাভের প্রার্থনা করেন। এই দম্পতীর দুইটী পুত্র হইয়া অকালে পরলোকগত হওয়ায় এবং দরিদ্রতাবশতঃ উড়ুপী গ্রামের বাসস্থান ত্যাগপূর্ব্বক পাজকাক্ষেত্রে গমন করেন। ইহাদের একমাত্র কন্যা ছিল, কিন্তু নৈষ্ঠিক বিপ্রপুঙ্গব পুত্রার্থী হইয়া প্রত্যহই উড়ুপী অনন্তেশ্বরের নিকট আগমন করিতেন। ইহার ফলে এক বিষুবৎ সংক্রান্তির দিনে অসংখ্য লোক কোন পর্ব্বোপলক্ষে অনন্তেশ্বর-মন্দিরে সমাগত হইলে এক সাধু, মন্দিরের সম্মুখস্থ স্তম্ভের ধ্বজোপরি উঠিয়া উচ্চরবে অনতিকাল মধ্যে বায়ুর অবতারের প্রসঙ্গ প্রচার করিলেন। তাহাতে 'মধ্যগেহ' তাঁহার বর প্রার্থনা সিদ্ধ হইল বুঝিতে পারিলেন।


মধ্যগেহ-নামের উদ্দেশ্য


পাজকাক্ষেত্রে আরও কতিপয় সমজাতীয় ব্রাহ্মণের বাস ছিল। এক বংশীয় কতকগুলি ব্যক্তি একটী পল্লীতে বাস করিলে পূবের বাড়ী, পশ্চিমের বাড়ী, মাঝের বাড়ী, পার্শ্বের বাড়ী প্রভৃতি সংজ্ঞা দ্বারা পরস্পরের বাড়ীর কর্ত্তৃপক্ষগণকে সংজ্ঞিত করা হয়। এই প্রকার সংজ্ঞা পূর্ব্বেও দেওয়া হইত। শ্রীমধ্বাচার্য্যের পিতৃদেবও এইরূপ সংজ্ঞাক্রমে 'মধ্যগেহ' বলিয়া কথিত হন। অনেক সময় সম্মানিত ব্যক্তিগণের উল্লেখ করিতে হইলে কার্যক্ষেত্রে ঐরূপ নামকরণের আবশ্যকতা লক্ষিত হয়। শ্রীমধ্বমুনির পূর্ব্বপুরুষগণ পবিত্র ব্রাহ্মণ এবং শাস্ত্রপারদর্শী ছিলেন। পাজকাক্ষেত্রে ভট্ট পল্লীর মধ্যগেহ ভট্ট পরম সদাচার-নিপুণ এবং আনুষ্ঠানিক বিপ্র বলিয়া প্রসিদ্ধ ছিলেন। কেহ কেহ বলেন, মধ্যগেহ ভট্টের নাম মধেজী ভট্ট; তুলু ভাষায় নড়ুভন্তিল্লয় অর্থাৎ মাঝের বাড়ী।


শ্রীমধ্বের পূর্ব্ব নাম বাসুদেব, মাতা বেদবিদ্যা


তৎকালে তুলুব দেশে বিষ্ণুবিগ্রহের বিরল অধিষ্ঠান ছিল। বিশেষতঃ শিবাল্লী ব্রাহ্মণকুল সাধারণ-বিচারে শৈবধর্মাবলম্বী বিপ্র বলিয়া পরিচিত। এই কুলে আমাদের বৈষ্ণবাচার্য্য উদ্ভুত হন। পিতা মধ্যগেহ ও মাতা বেদবিদ্যা অনন্তেশ্বরের রূপায় দেবোপম পুত্ররত্ন লাভ করিয়া তনয়ের নাম বাসুদেব রাখিয়াছিলেন। বাসুদেবের মাতৃদেবী বেদবিদ্যা, কাহারও মতে বেদবতী সংজ্ঞায় কথিত হইয়াছেন। পুত্র ভূমিষ্ঠ হইবামাত্র পূবের বাড়ী মাঝের বাড়ীর সদ্য-প্রসূত সুকুমার শিশুর জন্য এক দুগ্ধবতী গাভী প্রদান করিয়াছিলেন। মধ্যগেহ ভট্ট শিবাল্লী ব্রাহ্মণ হইলেও ভগবান্ বিষ্ণুতে তাঁহার যথেষ্ঠ মতি ছিল। পুত্রের নামকরণে বাসুদেব সংজ্ঞাই তাহার বিশিষ্ট পরিচয়। এই কুলে বিষ্ণুর পারতম্য ও সর্ব্বশ্রেষ্ঠতা জ্ঞান কিছুকাল হইতে পুষ্টিলাভ করিতেছিল, ইহারও নিদর্শন পাওয়া যায়।


মধ্বের আবির্ভাবক্ষেত্রে রামানুজের প্রভাবের অভাব


যদিও শ্রীরামানুজাচার্য্য মধ্বজন্মের দুই শতাব্দী পূর্ব্বে অবৈষ্ণব মত নিরসন পূর্ব্বক লোক সমাজে নারায়ণের সর্ব্বোত্তমতা স্থাপন করিয়াছিলেন, তথাপি সহ্যাদ্রির পশ্চিম বিভাগে তৎকালীয় রামানুজীয় বিশিষ্টাদ্বৈতালোক প্রবেশ করে নাই। সহ্যাদ্রির প্রাক্ প্রদেশ কর্ণাট ও চোল দেশে রামানুজ-প্রভাব ন্যূনাধিক অদ্বৈতপন্থীগণের কঠোর গ্রন্থি অবশ্যই শিথিল করে। শঙ্করের অহং- ব্রহ্মোপাসনার কুফল অচ্যুতপেক্ষ্য স্বীয় গুরুর নিকট হইতে অন্তিম কালে গৌণভাবে শ্রুত হইয়াছিলেন। সুতরাং ভাগবত সম্প্রদায়ের কথঞ্চিৎ অস্তিত্ব মধ্বাবির্ভাব কালের পূর্ব্বেও তুলুব দেশে লক্ষিত হয়।


সহ্যাদ্রির পশ্চিমে পঞ্চরাত্র অপেক্ষা ভাগবতের প্রাবল্য


শ্রীমধ্বাবির্ভাবের পূর্ব্ব হইতে আমরা পাঞ্চরাত্রিক ও ভাগবত সম্প্রদায়ের কথা শুনিয়া থাকি। পাঞ্চরাত্রিকগণের মধ্যে শঙ্খ-চক্রাদি মুদ্রাধারণ-বিধি প্রবর্তিত ছিল, পরন্তু ভাগবতগণ গোপীচন্দন বা গোপী মৃত্তিকাদ্বারা তিলকাদি অঙ্কিত করিতেন। এক্ষণেও তুলুব দেশে মাধ্ব-বৈষ্ণবগণের মধ্যে পাঞ্চরাত্রিক ব্যবহারমত মুদ্রা ধারণের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু তুলুব দেশীয় ভাগবত সম্প্রদায় মাধ্বগণের ন্যায় মুদ্রাদি ধারণ করেন না। মাধ্ব জন্মের পূর্ব্বে রামানুজীয় পাঞ্চরাত্রিক মত সহ্যাদ্রির পশ্চিমে প্রাবল্য লাভ না করিলেও তথায় ভাগবত সম্প্রদায়ের অধিষ্ঠান প্রশ্নের বিষয় হইতে পারে না। শঙ্কর-মতের প্রবল বিস্তৃতি, অনেকটা রামানুজীয়গণের পাঞ্চরাত্রিক ধৰ্ম্ম এবং ভাগবত সম্প্রদায়ের বৈভবক্রমে গর্বিত হয়। শিবাল্লীগণের মধ্যে সেই ফল মধ্বের উদয়কালের পূর্ব্বেই কিছু কিছু লক্ষিত হয়।


বৈষ্ণবের জন্ম—কর্মফলাধীন নহে


কৰ্ম্মফলবশে যে-প্রকার অবৈষ্ণব জীবগণ ভিন্ন ভিন্ন শরীর ধারণপূর্ব্বক নিজ যোগ্য কৰ্ম্মফল ভোগ করেন এবং ভোগান্তে বাসনাবশে পুনরায় কর্ম্মযোগ্য শরীর পাইয়া কৰ্ম্মফল লাভ করেন, নিত্য বিষ্ণুদাস বৈষ্ণবগণ তাদৃশ নহেন। জীবের সৌভাগ্যক্রমে কখনও তাঁহাদিগের মধ্যে শ্রীনারায়ণ নিজে অবতার হইয়া জীবের মঙ্গল বিধান করেন। কখনও বা বৈকুণ্ঠস্থ নিজ পার্ষদগণকে ধরাধামে অবতারণপূর্ব্বক লৌকিক তনু গ্রহণ করিবার অনুজ্ঞা প্রদান করেন। যে কালে ধর্ম্মের গ্লানি উপস্থিত হইয়া অধর্ম্মের প্রবলতা হয়, তৎকালে ভগবান মর্ত্ত্য জীবলোকে শুভাগমনপূর্ব্বক ধর্ম স্থাপন করেন। যেরূপ শ্রীরামানুজীয় পূর্ব্বতন সিদ্ধসূরিসকল বৈকুণ্ঠ হইতে কালে কালে অবতীর্ণ হইয়া হরিকৈঙ্কর্য্যের প্রভাব অজ্ঞান জীবহৃদয়ে বিকাশ করিয়াছেন, তদ্রূপ সকল বৈষ্ণবগণের নিত্য স্বরূপ আছে। বৈকুণ্ঠস্থ নিত্য স্বরূপ, সিদ্ধিকালে আপনা হইতেই পরিস্ফুট হয়। সেই নিত্য পার্ষদতনুর অবতার বলিয়া বৈষ্ণবগণ সমাজে পরিচিত হন।


নির্বিশেষবাদী কৰ্ম্মফলবাধ্য


নির্বিশেষবাদী বৈকুণ্ঠের অস্তিত্ব উপলব্ধি করিতে অক্ষম হইয়া সিদ্ধিতে সোহং প্রভৃতি ভাবমাত্র অবস্থিত বিশ্বাস করেন। সুতরাং নির্বিশেষ-বাদের অধীনে যে-সকল কৰ্ম্মফলবাদী জগতে উদিত হইয়াছেন, তাঁহাদের মতে ভগবানের বা ভক্তের নিত্য স্বনাম, স্বরূপ, স্বগুণ, স্বক্রিয়া' নাই, কেবল মায়া বা কুণ্ঠাদ্বারা পরিমিত হইয়া তাঁহারা কর্মফল ভোগ করেন। অবৈষ্ণবগণের নিত্য পরিচয়ে সোহং ভাব আবদ্ধ, তজ্জন্য তাঁহারা বৈকুণ্ঠ হইতে অবতীর্ণ না হইয়া মায়ারাজ্যে ভ্রান্তিবশতঃ কৰ্ম্মফল মাত্র ভোগের যোগ্য।


আচার্য্য মধ্বমুনির দেহ নিত্য, কিন্তু আচার্য্য শঙ্করের দেহ অনিত্য ও মিথ্যা


*আমাদের আচার্য্য শ্রীমধ্বমুনি, মনু, জৈমিনী প্রভৃতির ন্যায় কৰ্ম্ম- ফল-নিগড়ে আবদ্ধ ছিলেন না* বলিয়া বৈকুণ্ঠে তাঁহার নিত্য বিগ্রহ আছে। বিশেষতঃ নির্বিশেষবাদীগণের মতে চিন্ময়-বিগ্রহ বা পরিচয়াদি বিশেষ সমূহ কুণ্ঠা বৃত্তির ক্রিয়াবিশেষ। স্বর্গ-নিরয়াদি ধামে দেব-কীটাদি দেহ নশ্বর ও মায়াজাত মিথ্যা। সেজন্য শ্রীশঙ্করাচার্য্যকে নির্বিশেষবাদীগণ শঙ্করাবতার নির্দেশ করিলেও তাদৃশ রুদ্র মহাশয়ের অনিত্য দেহ মিথ্যামাত্র জানিতে হইবে। বৈষ্ণবের শ্রীঅঙ্গ তাদৃশ নহে।

 
 
 

Comments


পরম্ বিজয়তে শ্রী কৃষ্ণ সংকীর্ত্তনম্

  • Instagram
  • Facebook
  • Youtube
  • Whatsapp
  • Telegram
  • Dribbble
  • TikTok

@২০২৪ চেতনার জাগরণ - এর দ্বারা

bottom of page