top of page
Search

রুর আচরণ

  • Writer: The Symbol of Faith
    The Symbol of Faith
  • Oct 19, 2024
  • 3 min read

রুর আচরণ


( ২৩শে ভাদ্র, ১৩২৯, ইং ৯ই সেপ্টেম্বর, ১৯২২ খৃষ্টাব্দ, শনিবারের “গৌড়ীয়”এর ১ম বর্ষের ৪র্থ সংখ্যায় শ্রীগৌড়ীয় মঠ হইতে পুর্ব্ব প্রকাশিত)


শ্রীগুরুর শ্রীমুখে যাহা উপদেশরূপেপ্রাপ্ত হইয়াছি ও তাঁহার আচরণ যেরূপ দেখিয়াছি তাহাতে বুঝিয়াছি, শ্রীগুরুতত্ত্ব যুগপৎ হরিসেবক ও হরিজন-সেব্য। ইহা কলিযুগ পাবনাবতার শ্রীশ্রীগৌরসুন্দরের প্রচারিত বেদোপদিষ্ট অচিন্ত্য-ভেদাভেদ তত্ত্বের অন্ততম উদাহরণ। গৌড়ীয় বৈষ্ণবাচার্য্য শ্রীশ্রীবিশ্ব বৈষ্ণব রাজসভার প্রাক্ পাত্ররাজ শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী ঠাকুর গ্রন্থশিরোমণি শ্রীশ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে বেদনির্যাস সিদ্ধান্ত দিয়াছেন,—


"যদ্যপি আমার গুরু চৈতন্যের দাস।

তথাপি জানিব তাঁরে তাঁহারই প্রকাশ ॥"


শ্রীগ্রন্থের অন্যত্র, শ্রীকৃষ্ণ হইতে শ্রীগুরুকে অভিন্ন জানিতে উপদেশ করিয়াছেন। এই শেষোক্ত বিচারটীর জঘন্য ব্যাখ্যা ও তদনুগ দুষ্টাচার চলিয়া গুরুনামধারী লঘু ও তৎকর্ত্তৃক বঞ্চিত শিষ্যকে নিরয়-পথে প্রেরণ করিতেছে। ভণ্ড গুরু, কৃষ্ণ হইয়া তদুপযোগী লীলাসমূহ করিয়া শিষ্য-শিষ্যাগণের সদ্যোমুক্তি সাধন করিতেছেন ও স্বয়ং মুক্ত হইয়া অসংযতভাবে নরকপথে ছুটিতেছেন। এখানে মুক্ত বলিতে স্বেচ্ছাচার। নানাবিধ হরিবিমুখদলের এই বুদ্ধি। তাহারা বুঝিতেছে না, গুরুকে যেমন শ্রীকৃষ্ণাভিন্ন দেখিতে হইবে, সেইরূপ গুরু আবার "চৈতন্যের দাস”। শ্রীশ্রীমহাপ্রভুর প্রিয়জন শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামী ও শ্রীজীব গোস্বামীপাদ উভয়েই এই তত্ত্বের সুন্দর সমাধান করিয়া উপদেশ দিয়াছেন। "গুরুবরং মুকুন্দপ্রেষ্ঠত্বে স্মর।” “শ্রীগুরোঃ শ্রীশিবস্যচ ভগবতা সহাভেদদৃষ্টিং তৎপ্রিয়তমত্বেনৈব মন্যন্তে। শ্রীগুরুদেব শ্রীমুকুন্দের প্রিয়তম পাত্র। সুতরাং তিনিও শ্রীকৃষ্ণ তত্ত্বই। কেননা, প্রভুর প্রিয়তমের উপর সমস্ত ভার থাকে, প্রিয়তমের সেবা করিলেই প্রভুর সেবা করা হয়। অতএব শিষ্য শ্রীগুরুকে সেব্যতত্ত্বরূপে তাঁহার সেবা করিবেন। গুরু সেই সেবা স্বয়ং গ্রহণ না করিয়া তদ্দ্বারা শ্রীকৃষ্ণপ্রীতি সংসাধন করেন। নিজে সেবা ল'ন না, অর্থাৎ গুরু স্বয়ং শিষ্যগণসহ শ্রীকৃষ্ণসেবা-নিরত থাকেন। শিষ্যগণ গুরুসেবা করিবেন, গুরু শ্রীকৃষ্ণসেবা করিতেছেন। আলঙ্কারিক ও দার্শনিক পরিভাষায় শ্রীগুরুকে আশ্রয় ভগবান ও শ্রীকৃষ্ণকে বিষয় ভগবান বলে, সুতরাং শ্রীগুরু কৃষ্ণ হইতে যুগপৎ ভেদাভেদ তত্ত্ব। যাঁহারা গুরুর আসন টানিয়া লইয়া হরিজনের সেবা দাবী করিতেছেন ও হরিসেবা ভুলিতেছেন, তাঁহারা কৃষ্ণসেবা-বিমুখতা অর্জ্জন করিয়া নিজ নিজ অনুবিধা বর্দ্ধন করিতেছেন। তাঁহারা শুরু হইবার অযোগ্য। হঠাৎ তাঁহাদের কবলে পতিত হইলে, বুদ্ধিমানজন আর বঞ্চিত না হইয়া তাঁহাদের হস্তমুক্ত হইয়া যথার্থ সাধু-গুরুর চরণ আশ্রর করিবেন। ঐ কৃষ্ণ সাজা অর্থাৎ শিষ্যের নিকট স্বীয় ভোগোপকরণ- সংগ্রহশীল গুরুনামে পরিচিত লোক গুলি অবৈষ্ণব। পারমার্থিক ভজনোন্মুখ ব্যক্তিগণ অবৈষ্ণবকে গুরুত্বে বরণ করিবেন না। অবশ্য এ বিচার, সংসারাভিনিবিষ্টচিত্ত কর্মীর বা অভেদাত্মবাদী ফল্গুজানলিপ্সুর প্রতি প্রযোজ্য নহে। পরমার্থ-শাস্ত্রে বলিতেছেন—


"অবৈষ্ণবোপদিষ্টেন মন্ত্রেণ নিরয়ং ব্রজেৎ।

তস্মাৎ পুনশ্চ বিধিনা সম্যগ, গ্রাহয়েদ্ বৈষ্ণবাদ্‌

গুরোঃ।।"


কয়েক বৎসর পূর্ব্বে গোস্বামি-সন্তান বলিয়া পরিচিত কোন এক ব্যক্তি বৈষ্ণবশ্রাদ্ধে নিমন্ত্রিত হইয়া আদেশ করিলেন, "তাইত' পা যে ধুইয়ে দিতে হয়?” যখন একজন জল লইয়া পা ধোয়াইতে গেল, তখন প্রভুর দয়া হইল, তিনি বলিয়া উঠিলেন, "আহা-হা! কত পুণ্যবলে এই ব্রহ্মার দুর্লভ বস্তু মিলে, তা' জান? প'ড়ে গিয়ে নষ্ট হ'য়ে যাচ্ছে যে গো। একটা পাত্র এনে ধরে' রাখা উচিত ছিল।” এই নমুনামত গোস্বামি-সন্তান যে কতগুলি আছেন, সেন্সাস্ বিবরণে তাহা প্রকাশিত হয় নাই। তবে সৌভাগ্যের বিষয়, ইঁহাদের সংখ্যা কম। শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে এইরূপ প্রকাশ্য সভায় সকলকে শিষ্যভাবে দেখিয়া তাঁহাদের সেবাদাবীর ব্যাপারটা সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু শিষ্যকে দিয়া নিজ কৃষ্ণবিমুখ অচিৎ শারীরিক জড়সেবা করাইয়া লইবার উদাহরণ বিরল নহে। শিষ্য ডাকিয়া (সময় সময় নাকি শিষ্যাকে ডাকিয়া) অঙ্গসেবার আদেশ দিয়া সেই সেবা স্বীকার করা বিষয়, ইঁহাদের সংখ্যা কম। শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে এইরূপ প্রকাশ্য সভায় সকলকে শিষ্যভাবে দেখিয়া তাঁহাদের সেবাদাবীর ব্যাপারটা সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু শিষ্যকে দিয়া নিজ কৃষ্ণবিমুখ অচিৎ শারীরিক জড়ষেবা করাইয়া লইবার উদাহরণ বিরল নহে। শিষ্য ডাকিয়া (সময় সময় নাকি শিষ্যাকে ডাকিয়া) অঙ্গসেবার আদেশ দিয়া সেই সেবা স্বীকার করা হয়। ইহা যেন বড় একটা কিছু নহে। এরূপ সেবা আদায় করিয়া লওয়াটা স্থলবিশেষে ত্যাগী পরিচয়াকাঙ্ক্ষীর অভ্যস্ত হইযা গিয়াছে। তাঁহাদের কেহ কেহ স্বশিষ্য বা তদভাবে সতীর্থ ভ্রাতাকে পর্য্যন্ত দিয়া স্বীয় সেবা, অঙ্গসেবা পর্য্যন্ত করাইয়া লইতে ব্যস্ত হন। শ্রীঈশ্বরপুরীপাদের শিষ্য গোবিন্দ ও কাশীশ্বর সতীর্থ হইলেও গুরুর আদেশমত শ্রীমন্মহাপ্রভুর তাঁহাদের সেবা স্বীকার করিয়াছিলেন। তাই বলিয়া তাঁহাদিগকে বিরূপ নিজ সেবায় নিযুক্ত করিবার আদেশ কেহই অনুমোদন করেন, না। অবশ্য শিষ্যের কর্ত্তব্য গুরুসেবা, শ্রীগুরুমুখে সাধারণভাবে শুনিবার অবসর শিষ্যের হইতে পারে ও শিষ্য গুরুসেবা করিবেন। কিন্তু যে গুরুনামধারী ব্যক্তিগণ শিষ্যের সেবা লইবার উদ্দেশে কৃষ্ণকে বঞ্চিত করিয়া স্বীয় ভোগার্থে সেবা আদায় করেন, তাঁহারা অপরাধ করেন মাত্র। তাঁহারা ভুলিয়া যা'ন, যাহা কিছু শিষ্যের নিকট হইতে প্রাপ্ত, সমস্ত কৃষ্ণসেবার জন্য, স্বীয় ইন্দ্রিয়চরিতার্থতার জন্য নহে। নিজেকে সেব্য তত্ত্বের আসনে বসাইয়া যাঁহারা স্বীয় ভোগ- তৎপরতা বৃদ্ধি হইতে ভোগ্য বস্তুর সংগ্রহে যত্নপর, তাঁহারা আমার ন্যায় লঘু বস্তু, তাঁহাদের গুরুত্ব নাই। গুরুর লক্ষণ-বিচারে উপনিষৎ আদেশ করিতেছেন, “শ্রোত্রিয়ং ব্রহ্মনিষ্টম্,” শ্রীমদ্ভাগবত বলিতেছেন, "শাব্দে পরে চ নিষ্ণাতং ব্রহ্মন্যুপসমাশ্রয়ম্।”


বেদ প্রতিপাদ্য ভাগবতধর্ম্মে অভিজ্ঞ ও ভগবন্নিষ্ঠা দ্বারা প্রশান্তচিত্ত যিনি, তিনিই গুরু। স্বর্গকাম বা মোক্ষসাধন-তৎপর জন স্বীয় উৎকর্ষকাম, তাঁহার ভগবন্নিষ্ঠা অর্থাৎ নিঃসংশয়রূপে ভগবানে নিত্যভক্তি নাই। কার্যসিদ্ধির জন্য যাঁহারা সামায়ক ভক্তির আবাহন করেন, তাঁহারা গুরু হইতে পারেন না।

 
 
 

Comments


পরম্ বিজয়তে শ্রী কৃষ্ণ সংকীর্ত্তনম্

  • Instagram
  • Facebook
  • Youtube
  • Whatsapp
  • Telegram
  • Dribbble
  • TikTok

@২০২৪ চেতনার জাগরণ - এর দ্বারা

bottom of page