top of page
Search

বৈষ্ণবই শুদ্ধ শাক্ত

  • Writer: The Symbol of Faith
    The Symbol of Faith
  • Oct 5, 2024
  • 3 min read

বৈষ্ণবই শুদ্ধ শাক্ত


—শ্রীশ্রীল প্রভুপাদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর


শক্তি ও শক্তিমানের একত্র উপাসনাই কর্ত্তব্য:


ব্যবহারিক জগতে শাক্ত ও বৈষ্ণবে বহুকাল বিরোধ চলিয়া আসিতেছে। পৌরাণিক ঐতিহ্যেও তাহা স্থান পাইয়াছে। বৈষ্ণব রাজা চন্দ্রহাসের বিবরণে আমরা তাহারই প্রকাশ দেখিতে পাই। কিন্তু সুষ্ঠুবিচারে যদি দর্শন করা যায়, তাহা হইলে শুদ্ধ শাক্ত ও বৈষ্ণবে বিশেষ পার্থক্য পরিলক্ষিত হইতে পারে না, যেহেতু একজন অনন্ত শক্তির ও অন্যতর একল শক্তিমানের উপাসক। শক্তির উপাসক, শক্তিমানের সেবক না হইয়া থাকিতে পারে না, আর শক্তিমানের সেবক সশক্তিক ভগবানের উপাসক, তাঁহার উপাস্য তত্ত্ব নিঃশক্তিক নহেন। "শক্তিশক্তিমতোরভেদঃ” এই সিদ্ধান্তে শক্তিশূন্য শক্তিমান্ উপাসিত হইতে পারেন না, অথবা শক্তিমান্ হইতে পৃথক্ তত্ত্বরূপেও শক্তির উপাসনা কিরূপে সম্ভবপর হইতে পারে? সুতরাং, নির্মূল সেবাধৰ্ম্মে অধিষ্ঠিত শাক্ত ও বৈষ্ণবে পার্থক্য কি? কিন্তু যে পার্থক্য পরিদৃষ্ট হইতেছে, তাহার কারণ নিৰ্ম্মল সেবা- বুদ্ধির ব্যত্যয় অর্থাৎ ভোগবুদ্ধির অভ্যুদয়।


গুণজাত উপাসনা অনিত্য :


গুণজাত বৃত্তি যখনই জীবকে অধিকার করিতেছে, তখনই সেবা-বৃত্তির হ্রাস বা লোপ সংসাধন পূর্ব্বক তাহার শক্তিমান্সহ শক্তির সেবা অন্তর্হিত করাইয়া ভোগেরই আবাহন করায়। বিশুদ্ধ সত্ত্বের স্থলে রজস্তম আসিয়া লোককে ভোগে প্রবৃত্ত করাইয়া ফেলে। এই অবস্থায় যে ধৰ্ম্ম তাহা নিত্য ধৰ্ম্ম নহে, সৌভাগ্যক্রমে ভোগপ্রবৃত্তি ও গুণাধিকার প্রশমিত হইলেই ঐ তাৎকালিক ধর্ম্মের আর অধিকার থাকে না। তখন জীব বিশুদ্ধসত্ত্বে অধিষ্ঠিত হইয়া নিৰ্ম্মল সেবাই তাঁহার বৃত্তি বলিয়া নিত্য ভগবদ্দাস অভিমান করিবেন। স্থলে ঐ রজস্তমোধিকৃত ভোগীর ধর্ম্মকেই বিকৃত বৈষ্ণব বা এক্ষণে কোন কোন শাক্ত ধৰ্ম্ম বলা হইয়া থাকে। এরূপস্থলে যে যে উপাসনায় যথার্থ সেবা বুদ্ধি নাই তৎতন্মূলে স্বস্ব জাগতিক সুখ-চেষ্টা বিরাজিত।


গৌণ বৈষ্ণব বা গৌণশাক্ত:


ধন, যশ, শত্রুনাশ, লোকবল প্রভৃতি লাভের জন্যই প্রজারঞ্জনাদির প্রয়োজন। লক্ষ্মী, কাত্যায়নী প্রভৃতি শক্তিকে অধিকারিক দেবতাজ্ঞানে তাঁহাদের নিকট এ পৃথিবীতে থাকা কালে সুবিধার জন্য যে যে বস্তুর প্রয়োজন হইয়া দাঁড়ায়, সেইগুলি প্রার্থনাই আমাদের সকাম কৃত্য হইয়া পড়ে, তখনই গৌণ বৈষ্ণব বা শাক্ত ধর্ম্মের যজন। সুতরাং মূলে নিষ্কাম শাক্ত ও বৈষ্ণবধর্ম্মে প্রভেদ না থাকিলেও আমরা গুণগত বৃত্তি লইয়া কামনামূলে সত্য হইতে উভয়কে পৃথক্ করিয়া ফেলিয়াছি। যাঁহারাই বৈষ্ণব বলিয়া পরিচয় দিতেছেন, তাঁহাদের সকলেই যে বিষ্ণুশক্তি লক্ষ্মী ও বিষ্ণুর নিষ্কাম সেবক, তাহা নহে, অনেকেই ভোগমার্গের বৈষ্ণব ও শাক্ত। যেখানে বিষ্ণুকে ও বিষ্ণুশক্তিকে আধিকারিক দেবতাজ্ঞানে ঐ জাগতিক শুভ প্রার্থনার প্রশ্রয় আছে, সেখানে নির্মূল সেবা, ধৰ্ম্ম থাকিতে পারে না। বৈষ্ণব বলিয়া পরিচয় দিলেও এবং বৈষ্ণব চিহ্নে চিহ্নিত থাকিলেও এরূপ বিষ্ণুপাসকের গৌণ বৈষ্ণব বা গৌণ শাক্ত ভিন্ন অন্য পরিচয় নাই।


শক্তিমান ব্যতীত কেবল শক্তির কর্ত্তৃত্ব বেদ বিরুদ্ধ:


স্বীয় ভোগোপকরণ-সংগ্রহ জন্য বহিরঙ্গা শক্তির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়, কেননা ভোগময় জগতে যাহা কিছু কার্য্য, সকলই শক্তিসঞ্জাত। তাই, ভোগাধিকৃত বুদ্ধি শক্তিমান্ বৈকুণ্ঠের দর্শনে অসমর্থ হইয়া ভোগময়ী মায়া- শক্তিকেই চিনিতে পারে, শক্তিমানের সংবাদ রাখে না। তাহাতেই বিরোধের সৃষ্টি। নচেৎ, যদি তটস্থ হইয়া বিচার করা যায় যে, শক্তির স্বতন্ত্রাধিষ্ঠান সম্ভবপর কিনা, তখন বেদানুগত হইয়া আমরা দেখিতে পাই, ভগবদন্তরালেই শক্তি আছেন। যেখানে শক্তিমান্ ছাড়িয়া পূর্ব্বে শক্তি ও পরে শক্তিমান, তাহা বেদ বিরুদ্ধ কপিলমতানুবর্তিতা। তাহারা প্রকৃতিকেই কর্ত্রী করিলেও বেদে তাহার স্বীকার নাই'।


শক্তিমানের আশ্রয় ব্যতীত শক্তির আশ্রয় অসম্ভব:


ব্রাহ্মণ, যাঁহার বেদই একমাত্র অবলম্বনীয়, সুষ্ঠুবিচারে শক্তিমান্ অস্বীকার করিয়া শক্তির আশ্রয় গ্রহণ করিতে পারেন না, বিশেষতঃ শক্তিকে কেবল অচিৎ বলা হয় না। শক্তি তদীয় তত্ত্ব। তদ্‌দ্বস্ত বা তত্ত্ববস্তু অর্থাৎ শক্তিমত্তত্ত্ব স্বীকার না করিলে তিনি শুদ্ধ শাক্ত হইতে পারেন না। কেননা, বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণ সত্বগুণাবলম্বী, তিনি কিরূপে সহ পরিহার করিয়া রজস্তমের অধীন হইবেন? বরং তিনি ক্রমে বিশুদ্ধ সত্ত্বরূপ নির্গুণতা অবলম্বন পূর্ব্বক ক্রমশঃ যথার্থ বৈষ্ণব হইবেন। তিনি স্বয়ং নিত্য ভোগ্য-তত্ত্ব বা শক্তি, সুতরাং তাঁহার কিছুমাত্র ভোগ প্রবণতা থাকিবে না, তিনি বিশুদ্ধ ভগবৎ সেবারূপ নিত্যস্বরূপ ধৰ্ম্মে অধিষ্ঠিত হইবেন, তখন জড়ভোগার্থে কৃত উপাসনাদিকে তাঁহার আর ভক্তি বলিয়া ভ্রম হইবে না, তিনি ভক্তি বলিয়া ভুক্তি স্বীকার করিবেন না ও ভুক্তিমূলা প্রার্থনাকে ভক্তির সহিত অভিন্ন ভাবিবেন না।


ভোক্তা ভক্ত নহে:


মায়ের কাছে আব্দার করিয়া, যত পারা যায়, আদায় করিবার যত্নকে মাতৃভক্তি বলা যায় কি? "কারও দুধে চিনি, আমার শাকে বালি" এই ক্ষোভকে যদি ভক্তি বলা যায়, তাহা হইলে জগতে ভক্তের অভাব থাকিত না, আর ভক্ত এত আদরণীয় তত্ত্ব হইত না। নিজ কার্যসিদ্ধির জন্য রাবণও মহামায়ার আরাধনা করিয়াছিলেন, কিন্তু তিনি ভক্তনামে অভিহিত হয়েন নাই।


ধ্রুব ও প্রহলাদ মহারাজে পার্থক্য:


ধ্রুব মহারাজের প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান বৈষ্ণবানুমোদিত ছিল না, যেহেতু তিনি রাজ্যলোভে ও দুঃখ নিরাকরণমানসে পদ্মপলাশলোচন হরির অনুসন্ধানে বাহির হইয়াছিলেন, তাহা শুদ্ধভক্তি নহে। পরে সৌভাগ্যবলে দেবর্ষি নারদের পাদাশ্রয়ে সাধুসঙ্গক্রমে তাঁহার সে দুর্ব্বদ্ধি দূরিভূত হয়, তখনই তিনি ভক্তাগ্রগণ্য হইলেন। প্রহলাদ মহারাজের চরিত্রে কদাপি এরূপ ভোগপ্রবণ, সেবারহিত বৈষ্ণব বা শাক্ত ধর্ম্মের আবাহন দেখিতে পাওয়া যায় নাই।


বৈষ্ণব ও শাক্তের শিবপূজা :


সময়ে সময়ে ভোগপর বিকৃত বৈষ্ণব বা শাক্তগণকে শৈবধৰ্ম্মযাজী দেখিতে পাওয়া যায়। যখন তাঁহারা মোক্ষসাধন-তৎপর হ'ন, তখন তাঁহারা শাঙ্কর শৈবগণের পথ অবলম্বন করেন। যখন তাঁহারা মায়ের নিকট আব্দার করেন, "এ সংসার-গারদে আর আমি থাকিতে পারি না, আমার এ গারদ হইতে উদ্ধার কর,” অর্থাৎ যখন ভোগ করিয়া দেখে, অবিমিশ্র সুখভোগ ঘটে না, তৎসহ দুঃখ ভোগ মিশ্রিত, তখন দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তিকল্পে মোক্ষচেষ্টা প্রবল হয়। আমরা অজ্ঞতাক্রমে উহাকেও ভক্তি বলিয়া মনে করিয়া লই, কিন্তু ঐরূপ মোক্ষ- প্রবৃত্তিতে শুদ্ধা ভক্তির স্থান নাই, তাহাও তাৎকালিক কাৰ্য্যসিদ্ধির জন্য আধিকারিক দেবতার উপাসনা মাত্র।


নির্ম্মলা ভক্তির লক্ষণ:


নির্ম্মলা ভক্তি ভোগ-মোক্ষ-বাসনা-দুষ্ট নহে। নিৰ্ম্মল বৈষ্ণব বা বিষ্ণুশক্তির আশ্রিতগণ শুদ্ধভক্তি-যাজী। এই সকল বিচার করিলে শাক্ত-বৈষ্ণবের বিরোধ থাকিতে পারে না। যাঁহার যেরূপ প্রাপ্য, তিনি তদ্রূপ ভজন করিবেন, তাহাতে বিবাদের স্থল কোথায়?

 
 
 

コメント


পরম্ বিজয়তে শ্রী কৃষ্ণ সংকীর্ত্তনম্

  • Instagram
  • Facebook
  • Youtube
  • Whatsapp
  • Telegram
  • Dribbble
  • TikTok

@২০২৪ চেতনার জাগরণ - এর দ্বারা

bottom of page