top of page
Search

“বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসঙ্কীর্ত্তনম্”

  • Writer: The Symbol of Faith
    The Symbol of Faith
  • Feb 17
  • 3 min read

“বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসঙ্কীর্ত্তনম্”

(শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর পরমহংস জগৎগুরু প্রভুপাদের হরিকথামৃত)


শ্রীচৈতন্যমঠে কোথায় কি লেখা থাকিবে

শ্রীল প্রভুপাদ ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের ১৯শে ফাল্গুন শ্রীশ্রীগৌরজন্মোৎসবের অধিবাস-বাসরে অপরাহ্ণে ভক্তবৃন্দকে উপদেশ প্রদান-প্রসঙ্গে বলিয়াছেন,-“গৌর জন্মস্থলী শ্রীধাম মায়াপুরের শ্রীচৈতন্যমঠের প্রথম সীমায় 'ভক্তির্বিজয়তে' এই বাণীটা লিখিত থাকিবে। মধ্যে অবিদ্যাহরণ সারস্বত নাট্যমন্দিরের নিকট 'সঙ্কীর্তনং বিজয়তেতরাম্' বাণী লিখিত থাকিবে, আর সেইস্থানে প্রতিপদে 'চেতোদর্পণমার্জ্জন', প্রতিপদে 'ভবমহাদাবাগ্নিনির্ব্বাপণ', প্রতিপদে 'শ্রেয়ঃ-কৈরবচন্দ্রিকা-বিতরণ', প্রতিপদে 'বিদ্যাবধূজীবন', প্রতিপদে 'আনন্দাম্বুধি-বর্ধন', প্রতিপদে 'পূর্ণামৃতাস্বাদন', প্রতিপদে 'সর্ব্বাত্মস্বপন'– এই সপ্তজিহ্বাযুক্ত শ্রীকৃষ্ণ-সঙ্কীর্ত্তনাগ্নির একটা কুণ্ড নিরন্তর প্রজ্বলিত থাকিবে, যেন শ্রীচৈতন্যমঠে মহাপ্রলয়েও সেই শ্রীকৃষ্ণসঙ্কীর্ত্তনাগ্নি নির্ব্বাপিত না হয়, নিরন্তর যেন শ্রীচৈতন্যমঠ সঙ্কীর্ত্তনাগ্নিতে প্রদীপ্ত থাকে, আর সেই কৃষ্ণ-সঙ্কীর্ত্তনাগ্নি-কুণ্ড হইতে কৃষ্ণ-নাম-মন্ত্রে দীক্ষিত ব্যক্তিগণের সংস্কার এবং বৈষ্ণব গৃহস্থগণের যাবতীয় সংস্কার সাধিত হইতে পারে, তাহা হইলেই প্রকৃত ব্রাহ্মণতা এবং গৃহমেধার পরিবর্ত্তে মঠমেধা বা সঙ্কীর্ত্তনমেধা সঞ্জীবিত থাকিবে।


শ্রীচৈতন্যমঠে শ্রীরাধাকুণ্ডের নিকট লিখিত থাকিবে, 'প্রেমা বিজয়তে-স্তমাম্'। এখানে কাম বা আত্মেন্দ্রিয়-প্রীতিবাঞ্ছার কোন গন্ধ থাকিবে না। শ্রীরাধাগোবিন্দের পরিপূর্ণ ইন্দ্রিয়তর্পণই এখানে সর্ব্বোপরি বিজয় লাভ করিবে। সঙ্কীর্ত্তনাগ্নির চেতোদর্পণমার্জ্জনময়ী শিখা প্রজ্বলিতা না থাকিলে আমাদের পরস্পর মনোমালিন্য, ছিদ্রান্বেষণ, মৎসরতা, কপটতা, বিদ্বেষ প্রভৃতি 'অনর্থ'- ধূলি-কঙ্করসমূহ নির্ম্মল-দর্পণসদৃশ চিত্তকে আবরণ করিয়া রাখিবে এবং নানাপ্রকার উপশাখা প্রভৃতি বিস্তারে যে 'অনর্থ'-অরণ্যানী সৃষ্ট হইবে, তন্মধ্যে কেবল ভবমহাদাবাগ্নিই উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতে থাকিবে। এইজন্য শ্রীপুরুষোত্তম ভট্টাচার্য্য–যিনি শ্রীমন্মহাপ্রভুর দ্বিতীয়স্বরূপ-রূপে শ্রীস্বরূপ-দামোদর সেই শ্রীস্বরূপপ্রভু সঙ্কীর্ত্তনপ্রবর্ত্তক শ্রীচৈতন্যদয়ানিধির অমন্দোদয়-দয়াদ্বারা হেলায় জীবকুলের চেতোদর্পণের অনর্থধূলি কঙ্কর নীরজীকরণের আদর্শ প্রদর্শন করিয়াছেন।


সঙ্কীর্ত্তনাগ্নির সপ্তজিহ্বা


যেরূপ শাস্ত্রে করালী, ধূমিনী, শ্বেতা, লোহিতা, নীললোহিতা, সুবর্ণা ও পদ্মরাগা—এই সপ্তজিহ্বাযুক্ত অগ্নির কথা রহিয়াছে, তদ্রূপ শ্রীগৌরসুন্দর, চেতোদর্পণমার্জ্জনাদি সপ্তজিহ্বাশালী সংকীর্তনাগ্নির কথা কীর্ত্তন করিয়াছেন। সংকীর্তনাগ্নি প্রজ্বলিত না হইলে কখনও ভবের মূলোৎপাটন এবং অপুনর্ভবের চরমফল প্রেমা উদিত হইতে পারে না। শ্রীগৌরসুন্দর এই সংকীর্ত্তনাগ্নির সপ্তজিহ্বাকে সাতটা উপমাদ্বারা উপমিত করিয়াছেন। চিত্তকে দর্পণের সহিত, ভবকে মহাদাবাগ্নির সহিত, শ্রেয়ঃকে কুমুদের জ্যোৎস্না বা শুভ্রত্বের সহিত, বিদ্যাকে বধূর সহিত, আনন্দকে সাগরের সহিত, প্রেমকে অমৃতের সহিত, কৃষ্ণসেবা-


প্রাপ্তিকে অবগাহন স্নানের সহিত তুলনা করিয়াছেন। 'প্রতিপদং' ক্রিয়াবিশেষণটী এই সাতটী বিশেষণের প্রত্যেকটীর পূর্ব্বেই ব্যবহৃত হইবে। এই কৃষ্ণ-সঙ্কীর্ত্তনাগ্নি জগতের যাবতীয় অন্যাভিলাষ, কর্ম্ম, জ্ঞান, যোগ, ব্রত ও তপঃ—সমুদয়কে ভস্মসাৎ ও আত্মস্মাৎ করিয়া সর্ব্বোপরি বিজয়লাভ করিবে এবং বিশ্বের যেখানে যত সুমেধা হইয়াছেন ও হইবেন, সকলেই শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-সংকীর্ত্তনের সর্ব্বোপরি বিজয় উপলব্ধি করিতে পারিবেন। কুমেধাগণই অন্যসাধন ও সাধ্যের স্বীকার করেন; কিন্তু সুমেধাগণ সঙ্কীর্ত্তনযজ্ঞে অকৃষ্ণবরণ পুরটসুন্দরদ্যুতি রুক্মবর্ণ মহাপুরুষের আরাধনা করিয়া থাকেন। শ্রীমদ্ভাগবত 'কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাহ-কৃষ্ণম্', 'ধ্যেয়ং সদা পরিভবঘ্নমভীষ্টদোহম্', 'ত্যক্ত্বা-সুদুস্ত্যজসুরেপ্সিত-রাজ্যলক্ষ্মীম্' প্রভৃতি শ্লোকে প্রচ্ছন্নাবতারী শ্রীগৌরসুন্দরের বন্দনা করিয়াছেন। সুমেধাগণের সপ্তজিহ্বাযুক্ত সঙ্কীর্ত্তন-যজ্ঞাগ্নি শ্রীচৈতন্যমঠে নিরন্তর প্রজ্বলিত থাকুক। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যসঙ্কীর্ত্তন হইলেই সত্যযুগের মহাধ্যান, ত্রেতার মহাযজ্ঞ, দ্বাপরের মহার্চ্চন যুগপৎ সাধিত হইবে। সত্যযুগে চারিপাদ ধর্ম্ম পূর্ণভাবে থাকিলেও ধ্যানমাত্র হইত, ত্রেতায় ত্রিপাদধর্ম্মে যজ্ঞমাত্র হইত, দ্বাপরে দ্বিপাদধর্ম্মে অর্চ্চনমাত্র হইত; কিন্তু কলিযুগ-পাবনাবতারী শ্রীগৌরসুন্দরের আবির্ভাবে সঙ্কীর্ত্তন আবিষ্কৃত হইলে যুগপৎ মহাধ্যান, মহাযজ্ঞ ও মহার্চ্চন সাধিত হইবার সুযোগ প্রদত্ত হইয়াছে। সঙ্কীর্ত্তনব্যতীত শ্রীরাধাগোবিন্দমিলিততনুর সেবা হয় না; অর্চ্চনের দ্বারা শ্রীরাধাগোবিন্দের সেবা হয় না; মহার্চ্চন সঙ্কীর্ত্তন আবশ্যক। যোগিগণের সাধন-ধ্যানে গোপিকাগণ তৃপ্ত হইতে পারেন না। দূরের জিনিষ-অপ্রাপ্ত জিনিষ আবৃত জিনিষ ধ্যানের যোগ্য। আপনার হইতে আপনার জিনিষ, সহজ সর্ব্বস্ব জিনিষ, নিত্য-আলিঙ্গিত বস্তু দূরের বস্তুর ন্যায় ধ্যানের যোগ্য নহে—


“চিত্ত কাঢ়ি' তোমা হৈতে, যত্ন করি, নারি কাঢ়িবারে।

বিষয়ে চাহি লাগাইতে।

তারে ধ্যান শিক্ষা করাহ, লোক হাসাঞা মার,

স্থানাস্থান না কর বিচারে॥

নহে গোপী যোগেশ্বর, পদকমল তোমার,

ধ্যান করি' পাইবে সন্তোষ।”


আচার্য্য শ্রীরামানুজ ও শ্রীমন্মহাপ্রভুর শিক্ষার বৈশিষ্ট্য


ধ্যানৈশ্বর্য্য, যজ্ঞৈশ্বর্য্য, অর্চ্চনৈশ্বর্য্যের আভাসেও গোপীর বিরাগ। আচার্য্য শ্রীরামানুজ অর্চ্চনৈশ্বর্য্যের কথা জগতে প্রচার করিয়া বহু অর্চ্চন বিমুখ অনর্থ-পীড়িত ব্যক্তির মঙ্গল সাধন করিয়াছেন। যে আচার্য্য রামানুজ মায়াবাদমত্তহস্তীকে প্রবলবেগে দলিত করিয়া জগতে মহাবরণীয় বৈষ্ণবাচার্য্যরূপে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছেন, এরূপ মহা-বৈষ্ণবও সঙ্কীর্ত্তনৈক-লভ্য কৃষ্ণপ্রেমের মধুরিমা বুঝিতে পারেন নাই। এই শ্রীধাম মায়াপুরে সেনবংশীয় রাজগণের সভা-কবি জয়দেব একদিন ইঙ্গিতে খানিকটা গৌরাবির্ভাবের গৌরচন্দ্রিকা গান করিয়া গীতগোবিন্দের মঙ্গলাচরণ করিয়াছিলেন।


“মেঘৈর্মেদুরমম্বরং”— শ্লোকের গূঢ় তাৎপর্য্য

শ্রীজয়দেব-সরস্বতী গৌরাবির্ভাবের আগমনী এইরূপভাবে গান করিয়াছেন,—


"মেঘৈর্মেদুরমম্বরং বনভুবঃ শ্যামাস্তমালদ্রুমৈ

র্নক্তং ভীরুরয়ং ত্বমেব তদিমং রাধে গৃহং প্রাপয়।

ইত্থং নন্দনিদেশতশ্চলিতয়োঃ প্রত্যধ্বকুঞ্জদ্রুমং

রাধামাধবয়োর্জয়ন্তি যমুনাকূলে রহঃ-কেলয়ঃ ॥”


"হে রাধে, নভোমণ্ডল নিবিড় ঘনঘটায় সমাচ্ছন্ন হইয়া উঠিল, বনভূমিও তমালতরুনিকরে কৃষ্ণবর্ণ, নিশাভাগে শ্রীকৃষ্ণ ভীরু, একাকী গমনে সমর্থ হইবে না; সুতরাং তুমি শ্রীকৃষ্ণকে নিজ সমভিব্যাহারে লইয়া গৃহে যাও!- নন্দের এইরূপ আদেশে বৃষভানুনন্দিনী হরির সহিত মিলিত হইয়া পথপ্রান্তবর্ত্তী কুঞ্জতরুর অভিমুখে প্রস্থান করিলেন। এই রাধামাধবমিলিতযুগলের যমুনাকুলে বিরলকেলি জয়যুক্ত হউন।”


পূজারী গোস্বামী উক্ত শ্লোকের যে টীকা করিয়াছেন, তাঁহার দ্বারা সকল কথা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয় নাই। মহানুভব বৈষ্ণবগণের হৃদয়ে শ্রীজয়দেব সরস্বতী এই গৌরচন্দ্রিকা যে– ভাবে প্রকাশিত করিয়া-ছিলেন, তাহাতে শ্রীধাম মায়াপুরের মহাযোগপীঠের এক প্রকোষ্ঠে শ্রীরাধামাধব ও স্বতন্ত্ররূপে রাধামাধবমিলিততনু গৌরশশধরের প্রকট লক্ষিত হয়। পারমার্থিক আকাশ নানামতবাদরূপ নিবিড় ঘনঘটায় সমাচ্ছন্ন হইয়া উঠিয়াছে, বৃন্দা-বিপিনের তরুনিকরের মাধুর্য্যময়ী সুষমা নানাপ্রকার আবরণে লোকলোচনে অন্ধকারময় প্রতিভাত হইয়াছে, দ্বাপরের নিশাভাগে অর্থাৎ দ্বাপরের শেষে শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হইয়া "মামেকং শরণং ব্রজ”, "অহং হি সর্ব্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ” প্রভৃতি যে সকল সাক্ষাদ্বাণী নিজোদ্দেশে বলিয়াছিলেন, নাস্তিকতার নিশা ও নেশা প্রবল হইলে জীবকুল স্বরাষ্ট্র পুরুষোত্তমের সেই সকল বাণীকে আসুর-বুদ্ধিতে দম্ভময়ী বিচার করিয়া মঙ্গলের পথ হইতে বিচ্যুত হইতেছে; সুতরাং এ সময় শ্রীকৃষ্ণস্বরূপে গমন করিলে কেহ তাঁহার কথা গ্রহণ করিবে না। লোকলোচনে শ্রীকৃষ্ণের এই ভীরুতার প্রতীতিকে প্রশমিত করিবার জন্য বৃষভানুনন্দিনীর সহিত শ্রীকৃষ্ণের মিলিত হইয়া আবির্ভাব আবশ্যক। সুতরাং 'গৃহং প্রাপয়' অর্থাৎ 'গৌরগৃহং মহাযোগপীঠং প্রাপয়', গৌরগৃহ মহাযোগপীঠে রাধামাধব-


মিলিততনু হইয়া গমন কর নন্দগৃহ বা পুরন্দর জগন্নাথ মিশ্রগৃহ যোগপীঠে গমন কর।


নন্দের অপর এক নাম— বাসুদেব। যদিও আমরা চতুর্থ স্কন্ধে 'সত্ত্বং বিশুদ্ধং বসুদেবশব্দিতম্' শ্লোকে খানিকটা ঐশ্বর্যমার্গের বিচার দেখিতে পাই, তথাপি বিশুদ্ধসত্বেই বাসুদেবের আবির্ভাব। রাধামাধব-মিলিততনুর আবির্ভাবের অধিবাসোৎসব সঙ্কীর্ত্তনমুখে সাধিত হউক, অন্য সমস্ত চিন্তাস্রোত সঙ্কীর্ত্তনাগ্নিতে দগ্ধীভূত হইয়া যাউক, কৃষ্ণ-কামাগ্নি, কৃষ্ণনামাগ্নি, কৃষ্ণধামাগ্নিতে বিশ্বের নিখিল চেতন ইন্ধন হউক। অভিন্নব্রজেন্দ্রনন্দন আবির্ভূত হওয়ায় শ্রীযমুনার সহিত অভিন্নতাপ্রাপ্ত হইয়াছেন যে গঙ্গাদেবী, তৎকূলে রাধামাধবমিলিত যুগলের রসঃকেলি যে সঙ্কীর্ত্তনরাস, তাঁহা জয়যুক্ত হউক।

 
 
 

Comments


পরম্ বিজয়তে শ্রী কৃষ্ণ সংকীর্ত্তনম্

  • Instagram
  • Facebook
  • Youtube
  • Whatsapp
  • Telegram
  • Dribbble
  • TikTok

@২০২৪ চেতনার জাগরণ - এর দ্বারা

bottom of page