গুরু-বৈষ্ণব গণ কি আমাদের জড় বিচারের আসামী— যে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য? (সর্ব্বোর্ধ্বে কৃষ্ণ-প্রীতিরই মূল্যায়ন)
- The Symbol of Faith
- Dec 17, 2024
- 6 min read

শ্রীশ্রীগুরু গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ
গুরু-বৈষ্ণব গণ কি আমাদের জড় বিচারের আসামী— যে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য?
(সর্ব্বোর্ধ্বে কৃষ্ণ-প্রীতিরই মূল্যায়ন)
আনুগত্যহীন অনুর্ব্বর মস্তিষ্ক সম্পন্ন বাহাদুর লোকের কষ্টকল্পনায় বা তর্ক-বিতর্কে প্রভূত অমঙ্গঁলই প্রসৃত হয়, কিন্তু বাস্তবিক শ্রৌত পন্থায় প্রভূত মঙ্গঁলোদয় সুনিশ্চিত হয়, যথা—
“সমৃগ্যঃ শ্রেয়সাং হেতুঃ পন্থাঃ সন্তাপবর্জ্জিতঃ।
অনবাপ্ত শ্রমং পুর্ব্বে যেন সন্তঃ প্রতস্থিরে।।”
(ভঃ রঃ সিঃ উদ্ধৃত পুরান বচন)
অর্থাৎ পূর্ব্বতন মহাজনগণ যে পন্থা অবলম্বন করিয়া অনায়াসে ভজনপথে অগ্রসর হইয়াছেন, অক্লেশে সিদ্ধিলাভ করিয়াছেন, সেই পন্থাই পরম কল্যাণপ্রদ ও সন্তাপ বর্জ্জিত। সেই পন্থাই অন্বেষণ করা কর্ত্তব্য।। সন্তাপ বর্জ্জিত— অর্থে যাতে বিফল মনোরথ হতে হয়না বা সন্তাপ ভোগ করতে হয় না। গৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর পরমহংস জগদগুরু প্রভুপাদ বলেন যে,— আত্মবিদগণের নিকট যাঁহাদের অনুক্ষণ সেবা বৃত্তির উন্মেষ হয় নাই তাদের সঙ্গ যতই প্রীতিপ্রদ হোক না কেন তাহা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।”
এ জগতে সকলই উল্টো। কানা ছেলের নাম ‘পদ্মলোচন’ হয়, অথবা সম্পূর্ণ ধনহীন গরিব লোকের নাম হয় ‘ধনীরাম’, আবার কখনও বা বিশাল ধনবান জনের নাম ‘গরিব রাম’, সম্পূর্ণ দয়াহীন জনের নাম হয় ‘দয়ারাম’ ইত্যাদি। বাস্তবিক পক্ষে ধনীরামের সঙ্গে গরিব রামের কি আদৌ সৌহার্দ্য স্থাপন সম্ভব হয়? যদি তাই সম্ভব হয় তবে কেন অযথা লাভ-পূজা-প্রতিষ্ঠা-আকাঙ্ক্ষাশূন্য নির্মৎসর শ্রীল বাবা মহারাজ আপনাদের দ্বারা পুনঃপুনঃ আক্রান্ত হবেন?
রাবণ সীতা দেবীকে অপহরণ করলে সাতকান্ড রামায়ণ উদিত হয়।
যদিও কেবলমাত্র ছায়া সীতা স্পর্শেই রাবণের অধিকার হয়েছিল — তথাপি কেউই রাবণ কে ক্ষমা করেনি। চরম দাম্ভিকতাই তা’র বিনাশের কারণ হয়েছিল। গৌড়ীয় বাণীরূপ চৈতন্য সরস্বতী অপহরণে তৎপর রাবণের বিচার কোন্ ‘রাম’ করবেন? সেই হল-মুষলধারী সাক্ষাৎ বলরামই ওই সকল বিচার করে থাকেন। কেনারাম বা বেচারাম গোষ্ঠীর লোক বাঞ্ছারামই বটে (সর্ব্বদা নিজ অসদ্বাঞ্ছাপুর্ত্তিতেই ব্যস্ত)। কিন্তু দয়ারাম গোষ্ঠীর লোক (অর্থাৎ নির্মৎসর শুদ্ধ গুরু-বৈষ্ণবগণ) বাঞ্ছারামের অসৎ প্রবৃত্তির মূল উৎপাটনকল্পে সদাই অপ্রাকৃত দয়া প্রদর্শন করেন, কিন্তু এটাকে শত্রুতা জ্ঞান করে হাঁদারাম গোষ্ঠী অকাল-মৃত্যু (অধঃপতন) বরণ করে। দয়ারাম গোষ্ঠীর (বৈষ্ণবগণের) বাস্তব অর্থাৎ অকৈতব দয়াই প্রকৃতপক্ষে হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা দৈত্য-দানব বিনাশ করতে সক্ষম। কিন্তু তথাকথিত বৈষ্ণব সমাজ ঠুঁটোরাম অর্থাৎ অকর্মণ্যই বটে। কারণ তাদের প্রদর্শিত কৃত্রিম দয়ায় ভবাটবীতে ভিড় জমতে বাধ্য,কারণ কোন সুরাহাই (সমাধান) এতে মেলে না। হাঁদারাম গোষ্ঠী সর্ব্বদাই গঙ্গারাম (মূর্খ অপদার্থ বিষয়ী) গোষ্ঠীর সঙ্গেই মিত্রতা স্থাপন করতে ব্যস্ত হয়। একসময় কাশী-বারাণসীতে কোন দিগ্বিজয়ী পন্ডিত প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু করতে এলে— সকল সাধুগণ যুক্তি করে তাঁর সঙ্গে কবীর দাস জীর শাস্ত্র বিচারের ব্যবস্থা করিয়ে দেন। প্রথমেই কবীর দাস জী তাকে প্রশ্ন করেন যে,— “আপ পড়কে সমঝা? অথবা সমঝকে পড়া ওহি পরমসত্য বস্তু কে বারেমে? এক বাণেই দিগ্বিজয়ী পন্ডিত ঘায়েল। শুষ্ক তর্কের দৌড় আর কতদূর হতে পারে?
শ্রীল প্রভুপাদ বলেন যে, — “ধর্ম্মধ্বজিগণের ধর্ম্মাচরণ বদ্ধজীব কে আরও অধিকতর বদ্ধদশায় লইয়া যায়।”
খ্যাত নামা কবি কবির দাস বলেছেন যে,—
“পোথি পড়ি-পড়ি জগ মুয়া, ভয়া ন পন্ডিত কোয়।
ঢাই আখর ‘প্রেম’ কা পড়ে সো পন্ডিত হোয়।।”
“অর্থাৎ বৃহৎ-বৃহৎ পুথি পড়িলেই পন্ডিত হওয়া যায় না, যিনি কিছুই জানেন না, অথচ শুধুমাত্র ‘প্রেম’— এই আড়াই অক্ষরের শিক্ষা লাভ করেছেন ও জেনে অনুভব করেছেন, তিনিই প্রকৃত ‘পন্ডিত’।”
শ্রীল প্রভুপাদ আরও জানিয়েছেন যে, — “প্রাপঞ্চিক বিচার লইয়া অপ্রাকৃত বৈচিত্র্যে দোষারোপ করিতে যাওয়া নির্বুদ্ধিতার লক্ষণ।” তাঁর বিচার মতে,— “জগতে অনুস্বার-বিসর্গ নিয়ে মাথা ও জিহ্বার কসরৎ করার লক্ষ-লক্ষ দল আছে; পরব্যোম হ’তে আবির্ভূত চেতনময় শব্দের তাৎপর্য্য তাদের উপলব্ধি হ’বে না, তা’রা হরিকথা বলতে পারে না, তা’দের কথা গ্রামোফোনের গানের মত। তারা বিষয়েই ডুবে যা’বে— সত্যের উপলব্ধি হ’বে না।”
তিঁনি আরও জানিয়েছেন যে — “বুদ্ধিমান্ ব্যক্তি বিচার করেন, আমাদের যেন বাস্তবিক মঙ্গল হয় এবং সে মঙ্গল হ'তে যেন কোনদিন বঞ্চিত হ'তে না হয়। জড়জগতে যত কিছু বস্তু আছে, সেই সকল বস্তু তা'দের বিপরীত ধৰ্ম্ম উদয় করাবে— পাণ্ডিত্য, 'মূর্খতা' আনবে,— সুখ 'দুঃখ' আনবে,— দুঃখ 'সুখ' আনবে, ইত্যাদি।”
শ্রীল প্রভুপাদ জানিয়েছেন যে,— “গুরু-বৈষ্ণবগণের নিন্দায় অধীর হওয়াই ‘বৈষ্ণবতার লক্ষণ’। সাধু-বৈষ্ণব নিন্দায় মৌন থাকা অধঃপতনের কারণ।”
ভগবতী উমা-দেবী ভগবান শঙ্করের অপমানে নিজ পিতা দক্ষ প্রজাপতি প্রতি বলেন যে,—
দোষান্ পরেষাং হি গুণেষু সাধবো
গৃহ্নন্তি কেচিন্ন ভবাদৃশা দ্বিজ।
গুণাংশ্চ ফল্গূন বহুলীকরিষ্ণবো মহত্তমাস্তেষ্ববিদদ্ভবানঘম্ ৷৷(শ্রীভাঃ ৪।৪।১২)
অনুবাদ– হে দ্বিজবর! কোনও কোনও সাধুপুরুষ অপরের দোষসমূহকেও গুণমধ্যে গ্রহণ করিয়া থাকেন, কিন্তু আপনার ন্যায় অসূয়া-পরবশ ব্যক্তি পরের গুণেও দোষই দর্শন করিয়া থাকে; যাঁহারা যথার্থ দোষ-গুণের বিচার করেন, তাঁহারা মধ্যম; আর যাঁহারা তুচ্ছগুণকেও মহৎ বলিয়া প্রশংসা করেন, তাঁহারা অত্যুত্তম। আপনি তাদৃশ সর্ব্বোত্তম ভবের প্রতিও দোষারোপ করিয়াছেন ৷৷
নাশ্চর্য্যমেতদ্ যদসৎসু সর্ব্বদা
মহদ্বিনিন্দা কুণপাত্মবাদিষু।
সের্ষ্যং মহাপুরুষপাদপাংশুভি-
নিরস্ততেজঃসু তদেব শোভনম্ ৷। (শ্রীভাঃ ৪।৪।১৩)
অনুবাদ– অথবা যাহারা এই জড় দেহকেই 'আত্মা' বলিয়া জ্ঞান করে, তাদৃশ অসৎ পুরুষ যে নিরন্তর মহাজনগণের নিন্দা করিবে, ইহাতে আর আশ্চর্য্য কি? যদিও মহাপুরুষগণ স্বীয় নিন্দা সহ্য করিয়া থাকেন, তথাপি তাঁহাদের পদরেণুসমূহ মহতের নিন্দা সহ্য করিতে পারে না, উহারা নিন্দকের তেজো নাশ করিয়া থাকে। অতএব অসতের মহৎ- বিদ্বেষই শোভনীয়; কারণ, তাহার দ্বারা উহাদের সমুচিত প্রতিফলই প্রাপ্তি হইয়া থাকে ৷৷
শ্রীমদ্ভাগবত প্রমাণে দেখা যায় যে,—
বিদ্যাতপোবিত্তবপূর্বয়ঃকুলৈঃ
সতাং গুণৈঃ ষড়্ ভিরসত্তমেতরৈঃ।
স্মৃতৌ হতায়াং ভৃতমানদুর্দ্দৃশঃ
স্তব্ধা ন পশ্যন্তি হি ধাম ভূয়সাম্।। (শ্রীভাঃ ৪।৩।১৭)
অনুবাদ— বিদ্যা, তপস্যা, ধন, সুন্দর দেহ, যৌবন ও আভিজাত্য– এই ছয়টী সাধুব্যক্তিদিগেরই গুণ; কিন্তু এই ছয়টীই আবার অসাধুব্যক্তিগণের নিকট বিপরীত ফল প্রসব করিয়া থাকে। ঐ সকল গুণের দ্বারা অভিমান বৃদ্ধি হওয়ায় অসাধুগণের বিবেকজ্ঞান লুপ্ত হয়। সুতরাং তাহারা অভিমানদৃপ্ত হইয়া মহজ্জনের তেজ দর্শন করিতে পারে না ৷৷১৭৷৷
যদা দেবেষু বেদেষু গোষু বিপ্রেষু সাধুষু।
ধর্ম্মে ময়ি চ বিদ্বেষঃ স বা আশু বিনশ্যতি॥ (শ্রীভাঃ ৭।৪।২৭)
অনুবাদ– যে সময়ে যে ব্যক্তি দেবগণে, বেদসমূহে, গো সকলে, ব্রাহ্মণে, বৈষ্ণবে, ধর্ম্মে ও আমাতে যে কেহ বিদ্বেষ করিবে, সে অতি শীঘ্রই বিনষ্ট হইবে ।
শ্রীল বাবা মহারাজ সত্যই ‘কৃপাসিন্ধু’, ‘সর্ব্ববিদ্যায় বিষারদ’, ‘অদোষদর্শী’, ‘সর্ব্ব-সংশয়-সম্যক ছেদনকারী’, ‘সর্ব্ব-বিষয়ে সিদ্ধ’, কিন্তু আমার আধ্যক্ষিক বিচারে মেপে নেওয়া বুদ্ধির দ্বারা উপরোক্ত কোন গুনটাই বা তাঁর মধ্যে খুঁজে পাবো?
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতের অন্ত্য ৪।১৭৬ সংখ্যক পয়ারে এরূপ অকৈতব সত্য সিদ্ধান্ত দৃষ্ট হয়, যথা—
দ্বৈতে ভদ্রাভদ্রজ্ঞান সব মনোধর্ম্ম।
এই ভাল এক মন্দ এই সব ভ্রম।।
এই প্রকার ভ্রম-প্রমাদযুক্ত জন নিজ জড় বিচার বুদ্ধি দ্বারা গুরু-বৈষ্ণবকেও মেপে নিতে চায়। শ্রীল প্রভুপাদের ভাষায় — “নিজ ক্ষুদ্র অধিকারে বৈষ্ণব
দেখিবারে চায়— অবশেষে অপরাধ হয়।”
শ্রীগৌরাঙ্গের নবদ্বীপ লীলায় দেখা যায় যে,— ঈশ্বর পুরীপাদ তাঁ’র স্বলিখিত শ্রীকৃষ্ণলীলা গ্রন্থ থেকে শ্রীনিমাই পন্ডিত কে কিছু ভুল দেখিয়ে দিতে বলেন আদৌ যদি কোন ভুল থেকে থাকে। তাতে তিনি উত্তর দেন যে ভক্তের বর্ণনে শ্রীকৃষ্ণের সর্ব্বথা সন্তোষ। ভক্তকে কোন দোষ স্পর্শ করে না। বাস্তব ভক্তের হৃদয়ের ধ্রুবানুস্মৃতি সর্ব্বদা বিরাজমান, ফলে স্মৃতি বিভ্রম আদৌ সম্ভব নয়। কিন্তু মনুষ্য লীলার অনুকূলে কদাচিৎ কখনোবা ঐরূপ লীলা দেখাতেও পারেন– আমাদের বঞ্চনা করতে, কিন্তু হৃদয়ের অন্তঃকরণে কোনরূপ-কোন প্রকার ভ্রান্তিবিলাস আদৌ সম্ভব নয়। শ্রীল বাবা মহারাজ অনর্গল হরিকথা-কীর্ত্তনের দ্বারা বহুবার প্রমাণ করে দিয়েছেন যে– তাঁর হৃদয়ে ধ্রুবানুস্মৃতি বিদ্যমান। কিন্তু তথাপি পূর্ব-পূর্ব গুরুবর্গের ন্যায় (যথা শ্রীল ভক্তি প্রমোদ পুরী গোস্বামী মহারাজ, শ্রীল ভক্তি কুমুদ সন্ত গোস্বামী মহারাজ, শ্রীল সত্য গোবিন্দ মহারাজ, শ্রীল ভক্তি শরণ ত্রিবিক্রম মহারাজ, শ্রীল নয়ণানন্দ দাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীল গিরি মহারাজ, শ্রীল ভক্তি বর্ধন সাগর মহারাজ, শ্রীল ভক্তি বল্লভ তীর্থ মহারাজ প্রভৃতি) বৈষ্ণবগণের ন্যায় কদাচিৎ কখন ঐরূপ লীলা প্রদর্শন করলে করতেও পারেন, কিছুই বলা যায় না। এমনকি শ্রীল ভক্তি প্রজ্ঞান কেশব গোস্বামী মহারাজ যদি কখনও কদাচিৎ বিস্মরণ লীলা প্রদর্শন করতেন তখন তৎক্ষণাৎ শ্রীল ভক্তি বেদান্ত বামন গোস্বামী মহারাজ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার লীলা প্রদর্শন করতেন। সাধু-গুরু-বৈষ্ণবগণ সর্ব্বদাই উদ্বেগশূন্য কিন্তু তথাপি আমাদের প্রতি তীব্র স্নেহ-বাৎসল্য কারণে কদাচিৎ উদ্বেগ প্রকাশ করেন– যদি বিপরীত লক্ষণ দেখতে পান, কেবল সেক্ষেত্রেই হয়তো সামান্য বিস্মরণ লীলা প্রকাশ করেন বা করে থাকেন।
শ্রীল ভক্তি বল্লভ তীর্থ গোস্বামী মহারাজের অন্তিম সময়ে যে বিস্মরণ লীলা দেখা গিয়েছিল (আমাদের বঞ্চনার্থে) তাঁতে কি তাঁকে অবৈষ্ণব বা বদ্ধজীব বলে ভেবে নেওয়া উচিত? ‘বৈষ্ণবের ক্রিয়া-মুদ্রা বিজ্ঞে না বুঝায়’— এই শাস্ত্র সিদ্ধান্ত কখনও ভুলে যাওয়া উচিত নয়। কখনও বা এমনও হতে দেখা গিয়েছে যে– ভক্তিহীন (পাষন্ড) তথা চরিত্রহীন বৈষ্ণবব্রুব অর্থাৎ কোন বৈষ্ণব অপরাধী হরিকথা কীর্ত্তন-স্থলে উপস্থিত থাকার কারণে শ্রীল বাবা মহারাজের অনর্গল মন্দাকিনী ধারার ন্যায় পরম পবিত্র হরিকথায় কিছু বিঘ্ন হয়েছে অর্থাৎ স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশে কিছু বিঘ্ন হয়েছে, ঠিক যেমন শ্রীমন্মহাপ্রভুর সঙ্কীর্ত্তন রাসে (শ্রীবাস মন্দিরে) কোন বিজাতীয় জনের উপস্থিতিতে তাঁর আনন্দের অভাব বোধের অভিযোগ। অথবা শ্রীল সনাতনের সম্মুখে বারাণসী-গঙ্গাতীরে ‘আত্মারামশ্চ মুনয়ো’ শ্লোকের ৬২ প্রকারের ও অধিক নূতন-নূতন অর্থবোধের উদ্গমে তিঁনি স্বয়ং (শ্রীমন্মহাপ্রভু) এই প্রকার অপ্রাকৃত সিদ্ধান্ত প্রমাণ দেন যে বিশুদ্ধ সঙ্গের গুণে অপ্রাকৃত হরিকথা কীর্ত্তন ততোধিক প্রকাশিত হয় ও আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যথা— মহাপ্রভু বলেন যে,—
“তোমার সঙ্গের গুণে উঠে অর্থের তরঙ্গ”
একথা হয়তো অন্ধ অভিযোগকারীগণ হেসে উড়িয়ে দিতে চাইবেন কারণ এসব বিষয়ে তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার অভাব নিশ্চয়ই আছে, নচেৎ ওই প্রকার অমৃতধারায় ভয়ংকর ‘কালকূট’ বিষ মিশ্রণের ষড়যন্ত্র আদৌ হৃদয়ে উদিত হওয়া উচিত ছিল কি? গোমাতা ঘাস খায় ও দুধ দেয়, কিন্তু সর্প দুধ গ্রহণ করে বিষ প্রদান করে— এই তাঁর মহিমা। ঠিক তদ্রূপ আপনাদের বিষাক্ত ব্যবহার তথা আচরণ।
কদাচিৎ কখনওবা শ্রীল প্রভুপাদও কোন কিছু বিস্মৃতির লীলা দেখালে তাঁর গণেশাখ্য বাসুদেব প্রভু তা স্মরণ করিয়ে দিতেন, হয়তো সেই কারণেই দোষ দর্শন হয়ে থাকতে পারে নচেৎ গণেশ উল্টে যাওয়ার কারণ কি হতে পারে! শ্রীল বাবা মহারাজ নিজের শরীরটাকেও ঘৃণা করেন। ফলে আমরা ঘৃণা করলে আপত্তি কি— তাই না? শ্রীমদ্ভাগবত গীতার ৪।৩৪ শ্লোক দ্রষ্টব্য—
তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া৷
উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ৷৷
এই উপরোক্ত উপদেশ লাহিড়ী মহাশয় গ্রহণ করেছিলেন বলেই পরমহংস বৈষ্ণব ঠাকুরের কৃপা পাত্র হিসেবে তিনি সিদ্ধ হন। (‘জৈবধর্ম’ গ্রন্থ দ্রষ্টব্য) শ্রীশ্রীল ভক্তি রক্ষক শ্রীধর দেব গোস্বামী মহারাজ জানিয়েছেন যে,— “বাইরের formএর চাকচিক্য না দেখে ভেতরের substance এর শুদ্ধতাকে গুরুত্ব দাও।” অর্থাৎ বাহ্য খোলস দেখো না বরং তাঁর ভেতরের সারবস্তু কি, তা দেখতে চেষ্টা কর। এই বহুল প্রচলিত ভুলটা করে অনেক অনেক হোমড়া-চোমড়া যম-মন্দিরে গিয়েছেন, যথা— দক্ষ-প্রজাপতি, শকুনি, দুর্যোধন প্রভৃতি। গৌড়ীয়-গণের হৃদয়েশ্বর স্বয়ংরূপ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু জানিয়েছেন যে,—
“প্রভু বলে ভক্ত বাক্য কৃষ্ণের বর্ণন।
ইহাতে যে দোষ দেখে সেই পাপীজন।।”
দোষ দর্শনকারী গণের চরণে বহু বহু দণ্ডবন্নতি জ্ঞাপন করি কারন ব্যতিরেক বিচারে তাঁরা আমাদের শিক্ষা-গুরুই বটে।
সংখ্যাতীত ধন্যবাদান্তে শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-গো-মাতার সেবায় নিয়োজিত শ্রীল বাবা মহারাজের অনুগত তথা স্বপার্ষদ শ্রীশ্রীল প্রভুপাদের আদর্শ অনুসরণকারী
শ্রী ভক্তি সিদ্ধান্ত বাণী সেবা ট্রাস্টের সদস্যবৃন্দ
Comments