আমাদের পূর্ববর্তী গৌড়ীয় গুরু-বর্গের কৃপা দ্বারা গৌড়ীয় মঠ পরিচালনা করা আর কোন এক সংগঠন পরিচালনা করা এক নয়।
আমাদের পূর্ববর্তী গৌড়ীয় গুরু-বর্গের কৃপা দ্বারা গৌড়ীয় মঠ পরিচালনা করা আর কোন এক সংগঠন পরিচালনা করা এক নয়।
২ জুন, ২০২৩
—শ্রীশ্রীল শ্যাম দাস বাবা মহারাজ
শ্রীশ্রী গুরু গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ
গৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ বলেছিলেন যে - "কেবল নিশকপট গুরু-বৈষ্ণবগণের সেবাই আমাদিগকে ভক্তি-সিদ্ধি দিতে পারে"।
আমরা দেখতে পাচ্ছি যে অনেক তথাকথিত ভক্ত সদগুরুর কাছে এসে আশ্রয় নেয়, কিন্তু গুরুপদপদ্মের সামনে তাদের আসার পিছনে তাদের আসল উদ্দেশ্য কী - এটাই মূল প্রশ্ন।
শ্রীল প্রভুপাদ বলতেন যে- "দীক্ষার পরে- যদি শিষ্যের কার্য্যকলাপ প্রমাণ করে দেয় যে আসলে তার ভক্তির প্রয়োজন নেই, তবে এটা নিশ্চিত যে তার অন্তরে কিছু অন্যাভিলাষ ( কৃষ্ণেতর অবাঞ্ছিত বাসনা) আছে।"
যারা ঘোষণা করেন যে “আমি অমুক সদগুরু-বৈষ্ণবের শিষ্য”; নিশ্চিত হউন যে তারা শুধুমাত্র তাদের নিজেদের ভোগের জন্য সেই বৈষ্ণবের নাম এবং খ্যাতি ব্যবহার করতেন চান। আমাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিগণই লাভ, পূজা, প্রতিষ্টা ইত্যাদি পেতে গুরুপদ্মকে নিজেদের সেবার জন্য ব্যবহার করতে চাই। তাদের মধ্যে অনেকেই গৌড়ীয় মঠে আসেন এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে- দিনে তিন-চারবার খাওয়া হবে, কোনো ঝামেলা ছাড়াই খুব সহজে সেখানে থাকা যায়;নিরাপদে কোনো সমস্যা ছাড়াই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বৈষয়িক যোগ্যতার কারণে গৌড়ীয় মঠে সম্মান ও পদ লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে আসেন।
শ্রীল প্রভুপাদ বলতেন যে – “সেই সময় থেকে যখন সমস্ত মায়াবাদীরা ভক্তদের পোশাকে গৌড়ীয় মঠে আসতে শুরু করে, তখন থেকেই সমস্যা শুরু হয়”। তাদের কার্য্যকলাপ অনুসারে বুঝতে পারা যায় যে তারা গৌড়ীয় পরম্পরার মধ্যে নেই। এখন এই ব্যাপারে কেউ মাথা ঘামাবে না। বর্তমানে কেউ পরম্পরার বিশুদ্ধতা নিয়ে ভাবছে না, তারা কেবল তাদের নিজস্ব সংগঠন নিয়েই আগ্রহী। আমাদের পূর্ববর্তী গৌড়ীয় গুরু-বর্গের কৃপা দ্বারা শ্রীগৌড়ীয় মঠ পরিচালনা করা আর সংগঠন পরিচালনা করা এক নয়।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সময়ে সেই ভক্তরা কখনই তাদের ইষ্ট-দেবের সেবা সুষ্ঠুভাবে সংগঠিত করার জন্য একটি সংগঠন গঠনের প্রয়োজনীয়তা মনে করেননি, কারণ তাদের একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু ছিল; এক এবং অভিন্ন, তাদের কারোরই আলাদা কোনো আগ্রহ ছিল না, তাই সকলেই তাদের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ভগবত-সেবার পথে নিজেদের মধ্যে একটি পরম সামঞ্জস্য খুঁজে পেতেন। কিন্তু বর্তমানে সংগঠন গঠনের পরেও আমরা আমাদের ভগবত-সেবা সুচারুভাবে চালাতে পারছি না কারণ আমরা সবাই আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। গৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ বলেছেন যে - "আপনারা সকলে মিলিয়া-মিশিয়া একই আশ্রয়-বিগ্রহের আনুগত্যে একতাৎপর্য্যপর হইয়া ভগবত সেবা সাধনের চেষ্টা করুন।"কিন্তু তার আদেশের তোয়াক্কা করে কে?
গৌড়ীয় সিদ্ধান্ত বিচার এতই সূক্ষ্ম, এতই নির্ভুল যে ইন্দ্র, বরুণের মতো দেবতারাও বুঝতে পারেন না। গৌড়ীয় ভজন সস্তা জিনিস নয়। এ জিনিস এক শ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদের অনুগত যারা আছেন তাদের কাছে ছাড়া আপনি এই চৌদ্দভুবনে কোথাও পাবেন না। আজকাল সবাই শুদ্ধ ভক্তিসিদ্ধান্ত বিচারের সাথে কিছু আপস করতে পছন্দ করে। গৌড়ীয় মঠ মানে হল শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর দেখানো আচার ও প্রাচার যা শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর ও শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের হিতৈষ্যের মাধ্যমে উপলব্ধ। শ্রীল প্রভুপাদ বলতেন যে- “এক প্ল্যাটফর্ম বক্তাকে প্রচারক হিসাবে সম্মান দেওয়া যায় না, কারণ তাদের কোনও আচারণ নেই। তারা শুধু প্রমাণ করতে পারেন না যে তারা যা বলছেন, তা নিজজীবনে পালন করছেন।
গৌর হরি হরি বোল
Comments