top of page
Search

ভালো না করিতে পারি তো মন্দ করতে পারি, এখন কি দিবি তাই বল?

  • Writer: The Symbol of Faith
    The Symbol of Faith
  • Nov 26, 2024
  • 10 min read

শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গৌ জয়তঃ


ভালো না করিতে পারি তো মন্দ করতে পারি, এখন কি দিবি তাই বল?


(বদ্ধ জীবের গুরু দর্শনে লঘু দর্শনই স্বাভাবিক)


প্রথম কথা এই যে- 'বিভ্রান্ত নিরসন' নামে কোনো লেখা বই শ্রীদাস বাবা কর্ত্তৃক সম্পাদিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। ঐ ভাষাটাও ভুল, কারণ লেখা উচিত ছিল 'বিভ্রান্তি নিরসন'। নানাপ্রকার জটিল বিভ্রান্তি মূলক সিদ্ধান্তগত সমস্যা তথা স্ব সাম্প্রদায়িক মর্য্যাদা সংরক্ষণ মূলক সমস্যাগুলি শ্রীদাস বাবা এতকাল যাবদ সূচারু রূপে সমাধান করে আসছেন।— একথা কে না জানে। হঠাৎ বিগত ১৭। ১১। ২০২৪, রবিবার, ফেসবুক একাউন্ট— ‘শ্রীভক্তিসুন্দর পর্যটক’—এই নামে অকারণে মিথ্যা প্ররচনামূলক কিছু তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে- যেগুলি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যদিও আমাদের সময়েরও নিতান্তই অভাব, তথাপি অমূল্য কিছু সময় খরচা হলেও জবাব না দিলেই নয়, নচেৎ তাঁরা সাপের পাঁচপা দেখবে।


দ্বিতীয় কথা এই যে শ্রীদাস বাবার ঐকান্তিক স্নেহপাত্র লেখক মহাশয়ের ঐরূপ আক্রোশ বা ভীমরতির মূল কারণ কিহতে পারে? লেখাটা পড়েই লোকে বুঝে যাবে যে— কোন ভজহরিমান্না এই হাস্যাস্পদ লেখাটা লিখেছেন।


গৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ পরমহংস জগদ্গুরু বলেন যে,— "বদ্ধ জীব নিজ মঙ্গল অন্বেষণ করতে গিয়ে ততোধিক অমঙ্গল বরণ করে থাকে।" অর্থাৎ মঙ্গলে অমঙ্গল দর্শন তথা অমঙ্গলে মঙ্গল দর্শনই বদ্ধ জীবের নৈসর্গীক স্বভাব। শ্রীল প্রভুপাদ আরও বলেন যে,— "আমার একান্ত শত্রুরও (অর্থাৎ আমি কারও শত্রু না হলেও যিনি অকারণে আমাকে মহাশত্রু হিসাবে গ্রহণ করে নিয়ে আমার সর্ব্বনাশ চায়) অমঙ্গল কামনা যেন আমার হৃদয়ে কখনও উদিত না হয়, ভগবৎ চরণে এই স্বকাতর প্রার্থনা জানাই।" সকল কিছু বিপরীত হলেও তথাপি সর্ব্বমঙ্গলময় ভগবদ্ ইচ্ছায় সব কিছু অনুকূল দর্শনকেই বৈকুন্ঠ দর্শন বলা হয়, ফলে শ্রীদাস বাবা আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। প্রথমেই অভিনন্দন জানাই ঐরূপ এক অপূর্ব্ব ব্যাতিরেক মুখী প্রচার ব্যবস্থার জন্য। নীতি শাস্ত্রের বিচারে নিম্নলিখিত অমূল্য শ্লোক দৃষ্ট হয়, যথা—


"সদয়ং হৃদয়ং যস্য বাচঃ সত্যভূষিতম্।

কায়ঃ পরহিতং যস্য কলিঃ তস্য* *করোতি কিম্।।”


অর্থাৎ যাঁর হৃদয় সকলের বাস্তব মঙ্গল অন্বেষণে সর্ব্বদাই কাতর, যাঁর বাক্য সদা সর্ব্বদা সত্যে বিভূষিত, যাঁর নিজ শরীর পরহীতে নিয়োজিত, কলি তাঁর কি ক্ষতি করতে পারে? আগাগোড়া যাঁর জীবন কেবল শ্রীল প্রভুপাদ এবং শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর— তিনি সত্য সত্যই মহানিন্দার তথা ঘৃণ্য সমালোচনার যোগ্য পাত্রই বটে, এতে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ কৈ? শ্রীল প্রভুপাদকেও সহজিয়া ব্যভিচারীর দল বিশ্বনিন্দুক ভেবে নিয়ে নরকে চলে গিয়েছিল, কারণ তিনি তাদের নগ্ন স্বরূপ উন্মোচন করে দিতেন। শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়শ বলতেন যে— A fraud sadhu should be brought into the notice of public (কপট সাধুকে জনসমক্ষে ধরিয়ে দেওয়াই উচিত), কিন্তু তিনি বলতেন যে,— "চোর বলে ঐ চোর"।- এমনই ভয়ঙ্কর যুগ এসে গিয়েছে যে- সততার কোনও রূপ মূল্য নাই। শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না, কিংবা হাত দিয়ে যেমন সূৰ্য্য ঢাকা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনই তাঁর (শ্রীদাস বাবার) অনলস পরম সৎ-প্রচেষ্টাকে কলুষিত দেখাতে চাওয়া এক প্রকার বাচালতা মাত্র, কারণ সমগ্র বিশ্বই কম-বেশী তাকে চেনে, জানে বা সম্মান করে থাকে। সত্য সত্যই আপনাদের ইন্টালিজেন্ট গ্রুপের লেখা গল্পটা অবিশ্বাস্য হলেও অতীব চমৎকার হয়েছে বটে, কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় এই যে– গল্পটার সম্পূর্ণ back ground-ই baseless বা ভিত্তিহীন, ফলে পাবলিককে খাওয়ানো যাবে না, সম্পূর্ণ flop হবে। শুধু তাই নয়, লেখাটা অবশ্যই কোনো এক বিদ্বান ব্যক্তিকে দিয়ে আগাগোড়া সংশোধন বা সম্পাদনা না করিয়ে প্রকাশ করাটা উচিত হয় নি বলে মনে হয়।


যাঁকে হয়তো কেউ জিনিয়াস্ বা Jewell বলে সম্বোধন করে থাকে, আবার কেউ বা তাঁর অকৈতব সত্যের প্রতি প্রবল নিষ্ঠা দেখে নিজ লাভ-পূজা-প্রতিষ্ঠার প্রতিকূল বিচারে তাঁকে জানুয়ার বলতেও পারে, কিন্তু সেই সকল অতীব তুচ্ছ বিষয়ে তিনি সদা সর্ব্বদাই উদাসীন থেকে কেবল মাত্র নিজ ভজন সর্ব্বস্ব পরার্থ পরতাময় গুরু সেবায় নিয়োজিত আছেন, এবং ঐকান্তিক ভাবে যিনি স্ব সাম্প্রদায়িক স্বার্থ সংরক্ষণেও ব্যস্ত, তাঁকে অবশ্যই অতীব সহিষ্ণুতা সম্পন্ন বলে জানা উচিত, কারণ তিনি যদি 'তৃণাদপি সুনীচ' শ্লোকের আদর্শ না হন- তবে ঐরূপ নিরবচ্ছিন্ন গৌরবাণীর সেবা আদৌ তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।


লাভ-পূজা-প্রাতিষ্ঠাই যদি তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে কি হেতু তিনি ঐ সকল বিষয়ে আজ পর্য্যন্ত আগাগোড়া উদাসীন থাকতে পারেন? একটা সামান্য ব্যাঙ্কের খাতা বা একাউন্ট পর্য্যন্ত যাঁর নেই, যিনি সমগ্র জীবন নিষ্কিঞ্চন ভাবে জীবন যাপন করে সমগ্র প্রণামী পর্য্যন্ত গ্রন্থাদি প্রকাশনে তথা বাণী সেবায় উৎসর্গ করে থাকেন, তিনি অবশ্যই আমাদের সমালোচনার যোগ্য পাত্রই বটে।


মঠ মন্দির নির্মাণ, শিষ্য করা বা বিদেশ গমন- এসকল কোনো প্রসঙ্গই যাঁর সমগ্র ভজন জীবনে দেখা যায় না, ফলে তিনি অবশ্যই আমাদের তীব্র সমালোচনার পাত্রই বটে। শ্রীল প্রভুপাদ বলতেন যে- "উন্নত জনই সর্ব্বদা আক্রমণের সম্মুখীন হন।” এখনও আমাদের সমাজে মীর্জাফরের বংশধরগণ বেঁচে আছেন এবং বিপুল বংশ বিস্তার পূর্ব্বক সনাতনধর্ম্মকে আক্রমণ করতে সদা উদ্দ্যত থাকেন। এক গভীর জঙ্গল থেকে এক হিংস্র বন্যজন্তু যথা বাঘ বা সিংহকে তুলে আনা সম্ভব, কিন্তু মানুষের হিংস্র মনরূপ জঙ্গল থেকে ভয়ঙ্কর হিংসা বিদ্দেষরূপ পশুকে তুলে আনা বাস্তবিকই অসম্ভব বটে, নচেৎ এমনটিতো হওয়া আদৌ সম্ভব নয়। যিনি অজাতশত্রু, সকলের প্রতি সমভাব সম্পন্ন তথা মৈত্রী ও প্রীতির বন্ধনে সকলের সঙ্গে আবদ্ধ, সকলের পরম মঙ্গল প্রার্থী, তাঁকে কোন পাষণ্ড শত্রুর আসনে বসাতে চায়? এ বড়ই আশ্চর্য্য তথা অদ্ভুত বিষয় বটে। শ্রীল প্রভুপাদ বলেন যে,-" ফুলে মধু থাকে, তা প্রকাশ করে থাকে মধুকর বা মৌমাছি (সারঙ্গ মানেই সারভুক্), ফুলে বিষও থাকে তা প্রকাশ করে থাকে লুতা কীট। যদিও মধু সংগ্রহে মধুকরকে লুতা কীটের উপর নির্ভর করতে হয় না অর্থাৎ কেবল একক প্রচেষ্টাতেই সে তা (মধু) সংগ্রহ করে থাকে, তথাপি কেন জানা নেই লুতা কীট ও মধুকর এই উভয়ের ভিতর মাঝে মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ হয়ে থাকে। বিষ সতত পরিত্যাগেরই বস্তু, তথাপি ফুল থেকে বিষ ছাড়া কেবল মধু পাওয়া সম্ভব নয়, কারণ একমাত্র মধুকরেরই সেই ক্ষমতা আছে।"


ক্ষীর সাগর মন্থন করে যে ভয়ঙ্কর হলাহল বিষ উত্থিত হয়– তা মহামহিম বাবা বিশ্বনাথ (শিব) ঠাকুর পান করেন, ফলে আজ আমাদের এই জীবন-যাপন সম্ভব হয়েছে এবং পরিশেষে ঐ সাগর মন্থনে অমৃত উত্থিত হয়, যা কিনা দেবতাদের অমরত্বের কারণ হয়ে যায়। ঠিক তদ্রুপ সমগ্র সারস্বত গৌড়ীর সম্প্রদায়ের সাগর মন্থনে উত্থিত আপনাদের দ্বারা পরিত্যাক্ত হলাহল বিষগুলো শ্রীদাস বাবা একাই পান করে নিয়ে আপনাদের সকলের জন্য অমৃত দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু, হায় পোড়াকপাল!

আপনাদের কপালমন্দ দশাভারী- কী করা যায়? জগদ্গুরু শ্রীল প্রভুপাদ জানিয়েছেন যে- “আমার শতশত দুর্ব্বলতা থাকে থাকুক, শতশত ছিদ্র থাকে থাকুক, শতশত অনর্থ থাকে থাকুক, কিন্তু আমি বাণী গৌরের নিজ জন গণের সেবকানুসেবক সূত্রে শতশত আক্রমণ সহ্য করে ও কোটি কোটি কটাক্ষ বাণে জর্জ্জরিত হয়েও আত্ম সংশোধনের জন্য ও আত্মশাসনের জন্য সর্ব্বপ্রকার আপেক্ষিকতা বর্জ্জন করে, অথচ মূল আশ্রয় বিগ্রহের একান্ত পক্ষপাতি হয়ে যদি নির্ভীক কণ্ঠে পরম সত্য কথা প্রচার করি- তবে হয়ত জন্ম-জন্মান্তর পরেও আমি স্বরূপ-রঘুনাথ-কবিরাজ-নরোত্তম ভক্তিবিনোদ বাণী গৌরের গণে গণিত হতে পারব।"


তিনি আরও জানিয়েছেন যে- "আমার অনন্ত কোটি জন্ম হরি ভজন না হয় হোক, তথাপি যেন স্বরূপ-রঘুনাথ-ভক্তিবিনোদ বাণী বিরোধী চিন্তা স্রোত ও কার্য্যকলাপের অনুমোদন করতে চিত্ত ধাবিত না হয়। নিরপেক্ষভাবে আত্মসংশোধনের জন্য ও আত্মশাসনের জন্য এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে যেন হৃৎকম্প উত্থিত না হয়।” নিশ্চই কোন প্রকার প্ররোচনার শিকার হয়েই বেচারা কাঁচা লেখক ঠাকুর মহাশয় ঐরূপ মিথ্যা বাজিমাৎ করা গালাগালি সঙ্কলনে ব্যস্ত হয়ে দক্ষ প্রজাপতির মত নিজ ঘোরতোর অমঙ্গল ডেকে নিয়ে এলেন। সদ্বুদ্ধি সম্পন্ন ভক্তবৃন্দ অবশ্যই এই বিষয়ে অনুমান করতে পারেন। উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘরে চাপিয়ে লেখক কোন গোপন উদ্দেশ্য সাধন করতে উদ্যত হয়েছেন? লেখক মহাশয়ের জন্ম কবে হয়েছিল যে সে এতো পুরানো খবর জেনে ফেলেছেন? কিন্তু আশ্চর্য্য এই যে– শ্রীদাস বাবা ঐ বিষয়ে খবর পেয়ে মৃদু হাস্য যোগে উত্তর দেন যে– "এছাড়া আমি আর কি বা তাদের কাছে আশা করতে পারি! এটাই আমার পরম সত্যের সেবার জন্য পুরস্কার, তবে তারা ঐ সকল অভিযোগের কোনটারই প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিতে পারবে না, বরং সকল প্রত্যক্ষ অনুকূল প্রমানই ভগবদিচ্ছায় তারা আমাদের কাছে পেতে পারেন, অবশ্য যদি সৎ ইচ্ছা থাকে। একথা ধ্রুব সত্য যে— শ্রীগুরুদেব অতীব সু-প্রসন্ন চিত্তে পূর্ণ কৃপা সঞ্চার পূর্ব্বক আমাকে গৌরবাণী সেবায় অধিকার দেন, নচেৎ আমার মত মহামূর্খের কি যোগ্যতা আছে?


বিঃ দ্রঃ বিষয় এইযে আমার অন্য এক গুরু ভ্রাতা প্রসঙ্গেই 'মহানিন্দুক' শব্দটা প্রয়োগ হয়েছিল। সেই সময় আমাকে আদৌ সকলে ততটা চিনতো না, বড়ই লাজুক ছিলাম। খুবই কম হরিকথা বলতে হতো, ফলে আমার প্রতি ঐইরূপ বিরূপ মন্তব্যের আদৌ কোনো অবকাশই থাকতে পারে না। সম্পূর্ণ ভুল তথ্য এযেন ধান ভাঙ্গতে শিবের গীত হয়ে গেল। একথা প্রবীন ভক্তগণ প্রায় সকলই অবগত আছেন। যারা নবাগত তারা এই বিষয় জানেন না। সমগ্র সারস্বত গৌড়ীয় বৈষ্ণব সঙ্ঘের পক্ষ থেকে অধীকার প্রাপ্ত হয়েই আমাকে ঐসকল প্রতিবাদ মূলক লেখনী লিখতে হয়েছিল। শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় মঠের পূর্ব্বতন মঠ রক্ষক শ্রীভক্তি রক্ষক নারায়ণ মহারাজ, তথা শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মঠের মঠ-রক্ষক শ্রীবন মহারাজ আদি সকলের ঐকান্তিক ইচ্ছাতেই ঐ প্রতিবাদ মূলক জবাব দিয়ে স্ব-সম্প্রদায়ের মর্য্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে আমি একাই সকলের শত্রু হয়ে গেলাম। শ্রীমন্ নিত্যানন্দ প্রভু থেকে শুরু করে শ্রীরামানুজাচার্য্য, শ্রীমধ্বাচার্য্য, শ্রীল প্রভুপাদ সকলই আক্রমণ তথা অপমানের সম্মুখীন হন, সেক্ষেত্রে আমি কোন ছাড়! দক্ষ প্রজাপতি মৌখিক ভাবে বলেছিলেন যে- 'আমি কোনরূপ মৎসরতার বশে বা হিংসার বশে তাঁকে (অর্থাৎ শিবকে) কিছু বলতে চাই না, কিন্তু সত্যই তাঁর দ্বারা সাধুগণের আচরিত বিশুদ্ধ পন্থা দূষিত হয়েছে।' সত্যই কি তাই? ঠিক তদ্রুপ ঐ অবাঞ্ছিত সমালোচনা চরম মাৎসর্য্য দোষে দূষিত। শ্রীল গুরুদেব ঘৃণা করতেন বলেই কি আমাকে বাণী সেবার গুরু দায়িত্ব দেন? শ্রীল সন্ত গোস্বামী মহারাজ ঘৃণা করতেন বলেই কি আমাকে লেখা স্নেহ-আশীর্ব্বাদ পত্রে স্বসম্প্রদায়ের সেবার প্রেরণা দেন? শ্রীল ত্রিবিক্রম মহারাজ ঘৃণা করতেন বলেই কি দেহ রক্ষার পূর্ব্বে সেবক নিমাই প্রভুকে তাঁর নিজ ব্যবহৃত ছাতাটি আমাকে দিতে আদেশ দিয়ে যান? শ্রীল ভক্তি বল্লভ তীর্থ গোস্বামী মহারাজ ঘৃণা করতেন বলেই কি আমাকে নানাপ্রকার বিশেষ সেবা দিতেন ও বিদেশে প্রচারে আমেরিকা নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অথবা প্রিংন্টিং পাবলিকেশন ডিপারটমেন্টের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমাকে দিতে চেয়েছিলেন? অথবা ঐ মহাজনগণের ইচ্ছা বা প্রেরণা ছাড়া কিভাবে আমি তাঁদের জীবন লীলা লিখতে পারি? ঐসকল প্রচুর প্রমাণ থাকা সত্যেও যদি কেউ আমাকে নীচু দেখাতে চান- তাতে আপত্তি কি!”

বড়ই আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে আমাদের গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের এমন ব্যক্তিও কি আছে যারা সমালোচনা, নিন্দা বা প্রতিবাদ প্রভৃতির পার্থকাদি কিছুই বুঝেনা। যিনি অন্য সম্প্রদায়ের কোনও সৎ আচাৰ্য্য তথা সাধুর নিন্দা পৰ্য্যন্ত সহন করতে পারেন না- জবাব দিয়েই ছাড়েন (যথা শ্রীরামভদ্রাচার্য্য মহারাজের নিন্দায় শ্রীদাস বাবা বিভিন্ন ভাষায় তীব্র প্রতিবাদ মূলক ভাষণ রাখেন), সেই তিনি কি প্রকারে মাৎসর্য্য দোষে দূষিত হতে পারেন? যিনি অনর্গল হরিকথা কীর্ত্তনে (বিভিন্ন ভাষায়) তথা লেখায় সর্ব্বদাই ব্যস্ত, তিনি কি প্রকারে 'তৃণাদপি সুনীচ' ভাব বর্জ্জিত হতে পারেন? শ্রীমন্ মহাপ্রভু কৃত শিক্ষাষ্টম্ থেকে তৃতীয় শ্লোক কি মিথ্যা প্রমাণ করতে চান নিন্দুক সমালোচকগণ? সমগ্র জীবন যিনি নিষ্কিঞ্চন ভূমিকায় থেকে কেবল শ্রীচৈতন্য বাণীর সেবায় নিয়োজিত– তিনি যদি অযোগ্যই হন, তবে আপনাদের ইন্টালিজেন্ট গ্রুপ কেন চিরকাল পিছিয়ে রইলেন? সকল প্রবীন ভক্তগণের কথা ছেড়ে দিলেও যখন নিৰ্ম্মৎসর শ্রীল ভক্তি বিজ্ঞান ভারতী মহারাজের মত বিজ্ঞজন যখন প্রতিটা প্রতিবাদ গ্রন্থ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে অনুমোদন করতেন তথা প্রেরণাদি দিতেন আশীর্ব্বাদ সহ, তখন অন্যকারও নিন্দা বা সমালোচনায় কি আসে যায়? তিনি শ্রীধাম পুরীতে একদা শ্রীল প্রভুপাদের আবির্ভাব তিথির উপলক্ষ্যে ভাষণ প্রসঙ্গে ঘোষণা করেন যে— “আপনারা শ্রীদাস বাবার কৃত ঐ সকল প্রতিবাদের গ্রন্থগুলি পাঠ করে উপকৃত হবেন।” একথা লেখক মহাশয় কি জানেন না?


শ্রীদাস বাবার প্রতিটি লেখনী ও প্রবচনের (তা সে যেকোন ভাষাতেই হউক না কেন) নিজস্ব এক বিশেষ মৌলিকতা আছে, সে কথা প্রায় সকল পাঠক বা শ্রোতাই স্বীকার করে থাকেন, অবশ্য মাৎসর্য্য রোগে আক্রান্ত জন একথা অস্বীকার করতেই পারেন। একথা সকলেই প্রায় কম-বেশী জানেন যে- তাঁর লেখনী ও প্রবচন সর্ব্বত্র সর্ব্বদা কপি হয়ে থাকে, তথাপি তিঁনি কিছু মনে করেন না। অবশই তিনি কদাপি কারও লেখনী বা প্রবচন কপি করতে কোনই প্রয়োজন বোধ করেন না, অবশ্য কোন বিষয়ের প্রমাণ উদ্ধৃতি দিতে গেলে intact copy তো করতেই হয়। এতে কি দোষ হতে পারে? তিনি নিজ চেষ্টায় সদা সর্ব্বদা স্ব-সাম্প্রদায়িক বাণী বৈভব সংরক্ষণ তথা সম্প্রসারণের আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন, বিরোধীতা ছাড়া আমরা তাঁকে কিছুই দিতে পারিনি, তথাপি তিঁনি বিপুল প্রয়াস প্রচেষ্টা ছাড়েন নাই। সকলেই নিজ নিজ লাভ-পূজা- প্রতিষ্ঠা সংগ্রহে ব্যস্ত, কেউই স্ব-সম্প্রদায়ের মর্য্যাদা সংরক্ষণ বিষয়ে চিন্তা করতে নারাজ। ঠিক নয় কি? আপনাদের যা ইচ্ছা তা লিখতে বা বলতে স্বাধীনতা লাভ করে থাকতে পারেন, কিন্তু তিনি বিন্দুমাত্রও বিচলিত নন, কারণ শ্রীল প্রভুপাদ বলেন যে "সমগ্র জগৎ যদি আমার বিরুদ্ধে চলে যায়, তথা যাঁরা আমার কাছে এসেছেন-তাঁরাও যদি একে একে সকলেই আমাকে ছেড়ে চলে যান, তথাপি আমি শ্রীগুরু পাদপদ্মের ছত্র ছায়ায় দাঁড়িয়ে নির্ভীক ভাবে ঐ পরম সত্যের কীর্ত্তন করা থেকে বিন্দুমাত্র ও বিরত হব না।” পরম সত্য বস্তুর গ্রাহক অতীব বিরল বা সুদূর্লভ। পরম সত্যবস্তুর কীর্ত্তনকারী কদাপি জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেন না (যদিও ভগবান এতে পরম সন্তুষ্ট হন)। কখনও কখনও কোন একজন হয়ত শ্রীল প্রভুপাদের নামে তাঁর শ্রীগুরুদেবের নিকট তাঁর বিষয়ে নিন্দা যদি করতেন, তাতে তিঁনি পাত্তা না দিয়ে বরং কঠোর ভাষায় জানিয়ে দিতেন যে-" সরস্বতী সর্ব্বদা শুদ্ধ ভক্তির কথা বলেন, সেগুলো তোমাদের সহ্য হয় না?” ঠিক তদ্রুপ তাঁর বিশুদ্ধ আচার-বিচার ও প্রচারে যেন লঙ্কায় আগুন লেগেছে। কেউ তাঁকে সহ্য করতে পারছেন না– কেমন তাই কিনা? হিরণ্যকশিপু ততদিন পর্য্যন্ত প্রহ্লাদকে স্নেহ করতেন, যতদিন পর্য্যন্ত তিনি পরম সত্যের কীর্ত্তন প্রকাশ্যে করেন নাই।


শ্রীল তীর্থ গোস্বামী মহারাজ বা শ্রীল কুঞ্জবিহারী বিদ্যাভূষণ অথবা শ্রীল ত্রিবিক্রম মহারাজ কিংবা তার নিজ শ্রীগুরুদেবের জীবনী লিখে তিনি কি নোবেল পুরস্কার জয় করতে চেয়েছিলেন? বৈষ্ণবগণের আদেশেই তিনি ঐ সকল সেবা করেছিলেন, এতে মাৎসর্য্যানলে জ্বলে যাওয়া উচিত কি?


'শ্রীদাস বাবা' এটা ছদ্ম নাম। এইরূপ ছদ্মনাম ব্যাবহারের কারণই হচ্ছে নিজ নাম গোপন করে লাভ-পূজা-প্রতিষ্ঠা এড়িয়ে যাওয়া, সে ক্ষেত্রে পাষণ্ড লেখক ঠাকুর উল্টা বলে কুৎসা-রটনা করতে আগ্রহী হলেন কেন? অনেক অনেক গ্রন্থে তিনি বর্ত্তমান মঠাচার্য্যের নামেই গ্রন্থ সম্পাদকের নাম হিসাবে প্রকাশ করেন। এমনকি কোনো কোনো গ্রন্থে 'শ্রীদাস বাবা' বা অন্য কোনো নামই নাই, যথা শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় মঠ থেকে প্রকাশিত 'ভগবৎ সাক্ষাৎকার' নামক গ্রন্থ- যেটা কিনা শ্রীতুর্য্যাশ্রমী মহারাজ দ্বারা সঙ্কলিত হয়েছিল। নিৰ্ম্মৎসর বৈষ্ণব যথা ডাঃ হাওলাদার ও আরও অনেকেই অনেকবার এবিষয়ে মন্তব্য করেন যে- তিনি এই দাস বাবার ছদ্ম নামে নিরন্তর বাণী সেবা করেও নিজে সর্ব্বদাই লাভ-পূজা-প্রতিষ্ঠা এড়িয়ে থাকতে চান, কিন্তু যখন থেকে প্রবীন বৈষ্ণবগণ তাঁকে প্রত্যক্ষভাবে আদেশ করেন নিজ নাম দিতে, তখন থেকে সম্পূর্ণ নিজ নাম দিতে আরম্ভ করেন বৈষ্ণবী প্রতিষ্ঠা হিসাবে, কারণ নিজ লেখনীর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সম্পাদককেই নিতে হয়। জগদ্গুরু শ্রীল প্রভুপাদ 'বৈষ্ণব কে?'- এই লেখনীতে সুস্পষ্ট উল্লেখ করেন যে-


“কনক-কামিনী প্রতিষ্ঠা বাঘিনী

ছাড়িয়াছে যাঁরে সেই ত বৈষ্ণব।”

অথবা-

"বৈষ্ণবী প্রতিষ্ঠা তাতে করো নিষ্ঠা

তাহা না করিলে লভিবে রৌরব।।”


সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন জনগণ তথা ভক্তবৃন্দ নিশ্চই উপযুক্ত বিচার করবেন, এই সুদৃঢ় বিশ্বাস মুখে কিছু সাধারণ প্রশ্ন রাখতে চাই আমরা- যথা বেচারা লেখক মহাশয় যদি বাল্যকাল থেকে ঐ গ্রন্থের (বিভ্রান্ত নিরসন?) বিষয়ে শ্রীল দাস বাবার কাণ্ড-জ্ঞানহীন বিচারের খবর রেখে থাকেন, তবে এত সুদীর্ঘ কাল অপেক্ষার পর আজ এই মরণকালে তার আক্কেল গরম হওয়ার করণ কী? - (১)


আপনাদের ইন্টালিজেন্ট সংস্থার সদস্যবৃন্দের নামগুলি ও পরিচয় দিতে পারেন কী?- (২)


যে সকল মহারাজগণের নাম উল্লেখ মুখে শ্রীদাস বাবার নিন্দাগান করেছেন তাদের সঙ্গে তাঁর মুখমুখী প্রমাণ করিয়ে দিতে পারেন কী?- (৩)


যে বা যাঁরা শ্রীল প্রভুপাদকে মল-মুত্রবৎ ত্যাগ করে তাঁর এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত শ্রীগৌড়ীয় মঠের সর্ব্বনাশ সাধনে মেতে উঠেছিলেন বা মেতে উঠে আছেন (বর্ত্তমানে) তাঁরা আপনাদের এত প্রিয় ভাজন (পাত্র) হতে পারে কিভাবে?-(৪)


অবশ্য আপনাদের অতীব নিম্ন মানের বিচার প্রক্রিয়া থেকে সুস্পষ্ট বোধ হয় না কি-যে আপনারা তাদের পক্ষের লোক? প্রথমে অঘাসুর, বকাসুরও শ্রীকৃষ্ণের পক্ষের লোক হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিয়েছিলেন কিন্তু শেষে তাঁদের ক্রিয়া- কলাপে প্রমাণ হয়েছিল যে তাঁরা বিরোধীপক্ষের কংসের লোক।-(৫)


ঐ সকল বিরোধী গোষ্ঠী কীভাবে শ্রীল প্রভুপাদের পার্ষদ পদবাচ্য হন?- (৬)


এ যেন সেই বিশ্বাস ঘাতক মির্জাফরের মত ক্রিয়াকলাপ বলেই মনে হয়। শ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর পরমহংস জগদগুরু প্রভুপাদের সিদ্ধান্ত বিচার অনুসারে আমাদের শ্রীগৌড়ীয় মঠের ভক্ত পরিচয়ের পরিচিত হতে গেলে কি কি যোগ্যতা আমাদের থাকা উচিত? সেগুলোও কি শ্রীদাস বাবার মধ্যে দেখা গেল না? আপনাদের ইনটালিজ্যেন্ট গ্রুপের সকলের মধ্যে দেখা গেল নাকি?- (৭)


আপনাদের এই ইনট্যালিজেন্ট গ্রুপে আপনার মতো মহামহা ইনট্যালিজেন্ট সদস্য আর কয়জন আছেন? তাঁদের সম্পূর্ণ নাম ও পরিচয় দিতে পারেন কি? - (৮)


সর্ব্বসুহৃদ সর্ব্বজনমান্য সুবিখ্যাত এক মহান-ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে ঐরূপ সমালোচনার পরিণতি কী তা জানেন কী?- (৯)


অমানুষ শ্রীদাস বাবা সম্বন্ধে শ্রীল পরমহংস আচার্য্যবর্য্য ভক্তি প্রমোদ পুরী গোস্বামী মহারাজের অন্য কোন্ কোন্ মহামহিম প্রবীন শিষ্যগণের কথা লেখক ঠাকুর মহাশয় বলতে চেয়েছেন- যাঁরা শ্রীদাস বাবার কুৎসিত জঘন্য স্বরূপ অবগত আছেন?- (১০)


শ্রীচৈতন্য মঠে একদা সেবক পরমানন্দ প্রভু কর্ত্তৃক পরিবেশিত মধ্যাহ্নকালীন মহাপ্রসাদ শ্রীল প্রভুপাদের ভজন কুঠীরে তাঁর সম্মুখে দীর্ঘ সময় যাবৎ পরেছিল, কিন্তু তিঁনি একান্ত উদাসীন মনে জানালার বাহিরে দৃষ্টি নিক্ষেপ পূর্ব্বক কী যেন এক বিষয়ে তন্ময়ভাবে চিন্তা পরায়ণ ছিলেন। অনেক সময় পরে হঠাৎ সেবক পরমানন্দ প্রভু ভজন কুঠীরে ফিরে এসে দেখেন যে- তখনও তিনি প্রসাদ পান নাই, ফলে প্রশ্ন করেন যে- “প্রভুপাদ! কি দেখছেন জনলা দিয়ে? এখনও প্রসাদ পান নাই কেন?” শ্রীল প্রভুপাদ গম্ভীর স্বরে উত্তর দেন যে- “দেখছিলাম কেমনভাবে তোমাদের কপাল পুড়ে গেছে। যদুবংশ ধ্বংস হবে অন্তর্দ্বন্দে।” ঠিক তাই যেন হতে চলেছে।


ইতি দণ্ডবৎ প্রণামান্তে শ্রীল দাস বাবার অনুগত তথা স্বপার্ষদ শ্রীল প্রভুপাদের আদর্শ অনুসরণকারী সেবকগণ।


 
 
 

コメント


পরম্ বিজয়তে শ্রী কৃষ্ণ সংকীর্ত্তনম্

  • Instagram
  • Facebook
  • Youtube
  • Whatsapp
  • Telegram
  • Dribbble
  • TikTok

@২০২৪ চেতনার জাগরণ - এর দ্বারা

bottom of page